‘হেফাজতের দাবি সংবিধান বিরোধী’
৮ এপ্রিল ২০১৩কথিত নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ে হেফাজতে ইসলামের সারা দেশে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ চট্টগ্রামে হেফাজত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের লোকজন রেল এবং সড়ক অবরোধ করায় ঢাকা চট্টগ্রাম এবং সিলেটের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ ৪ ঘন্টার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ তারা নারায়ণগঞ্জেও রেল লাইন অবরোধ করে৷ ফটিকছড়িতে হেফাজত কর্মীরা ৫০টি দোকান ও ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ তারা বলেছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে৷ তবে তাদের সোমবারের হরতালে সমর্থন দেয়নি বিএনপি-জামায়াত৷
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ তাঁর মতে, এই সংবিধান বিরোধী দাবি আদায়ে তারা যদি বারবার কর্মসূচি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে সরকারের উচিত হবে তাদের কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া৷ দেশের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মানে হল রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা৷
তিনি বলেন, হেফাজতের দাবি নারী স্বাধীনতা, প্রগতি, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি বিরোধী৷ তাদের দাবি মেনে নিলে দেশ অন্ধকার যুগে চলে যাবে৷ দেশে মোল্লাতন্ত্র চালু হবে৷ তা এদেশের মানুষ মানবেনা৷
সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই হেফাজতের প্রতি যে সহানুভূতি দেখাচ্ছে, তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা রাজনীতি করছেন, ভোটের হিসাব করছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেফাজতকে আস্কারা দিলে দুটি দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তিনি আরও বলেন, ব্লাসফেমি আইনেরও কোন প্রয়োজন নেই৷ কারণ ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত করলে তার বিচারের জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা রয়েছে৷
ধর্মীয় অনুভূতিতে কথিত আঘাতের অভিযোগে ব্লগারদের ঢালাও গ্রেফতারের সমালোচনা করেন ড. মিজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, হেফাজতের কথামত তাদের গ্রেফতার করে মানবাধিকারের লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ মানবাধিকারের লঙ্ঘন করা হয়েছে তাদের সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির করে৷ তাদের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনো পুলিশ দেখাতে পারেনি৷ আর তাদের ছবি প্রকাশ করে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে৷
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যেই দাবি করুক না কেন ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করা হবেনা৷ তাঁর মতে, দেশে যেসব আইন আছে তাতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধান আছে৷ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বাস্তবভিত্তিক বলে মন্তব্য করেন মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান৷ তিনি বলেন হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার সঙ্গে তাদের দাবি পূরণের যে কোন সম্পর্ক নেই তা যত স্পষ্ট হবে ততই ভাল৷