1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্রুত গলছে, তথ্যটি ভুল

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০

হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে৷ আর এই হিমবাহগুলো গলে যাওয়ার মাত্রা এতটাই দ্রুত যে বিশ্বের উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমালয়ের এই হিমবাহগুলো গলে যাবে৷

https://p.dw.com/p/LtIe
ফাইল ফটোছবি: PA/dpa

জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এই তথ্যই জানিয়েছিল সম্প্রতি৷ কিন্তু এখন বলা হচ্ছে এই পূর্বাভাষ একটি ‘একটি দুঃখজনক ভুল'৷

হিমালয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটান - এই ছয়টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা হিমালয় পর্বতমালা হচ্ছে দুই মেরুর বাইরে বরফের সবচেয়ে বড় উৎস৷ বরফ, তুষার ও পানির বিপুল মজুদের কারণেই বিশ্বের উচ্চতম পর্বত শ্রেণীটির নাম হয়েছে 'হিমালয়'৷ বলা হয় 'তৃতীয় মেরু'৷ সব মিলিয়ে হিমালয়ে রয়েছে ১২ হাজার কিউবিক কিলোমিটার পানি৷

হিমালয়ের মজুদ বরফ থেকে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় জলপ্রবাহ৷ এমন একাধিক প্রবাহ মিলে তৈরি হয় নদী৷ এশিয়ার প্রধান পাঁচটি নদীধারা সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও ইরাবতির উৎস হচ্ছে হিমালয় পর্বতমালা৷ এসব ধারার শত শত শাখানদী ও উপনদী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হিমালয়ের ওপর নির্ভরশীল৷ নদী অববাহিকার বসতির কথা ধরলে পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে পূর্বে মিয়ানমার এবং উত্তরে তিব্বত মালভূমি থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ২০০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি, সেচ, পরিবেশগত ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য, যোগাযোগ, সংস্কৃতি হিমালয়ের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল৷

নোবেল বিজয়ী সংস্থা ইন্টারগভর্ণমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র পাচৌরি গণমাধ্যমে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণে এই ভুল হয়েছে৷ প্যানেলের ইতিহাসে এ ধরণের ঘটনা এবারই প্রথম৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল যৌথভাবে পান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর এবং আইপিসিসি৷ বিশ্বের সেরা আড়াই হাজার জলবায়ু বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত এই প্যানেল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ ছোবল থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে৷ কিন্তু সংস্থাটি একটি প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করায় সমালোচনার মুখে পড়ে৷ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্রম্নত গলে যাবে৷ বর্তমান উষ্ণতা চলতে থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যেই হিমালয়ের হিমবাহ বিলীন হয়ে যাবে৷

সংস্থাটির ওই রিপোর্ট আতঙ্কের সৃষ্টি করে৷ কারণ এশিয়ার কোটি কোটি মানুষ এই হিমবাহ গলা পানির ওপর নির্ভরশীল৷ প্রতিবেদনের উপসংহারে এর ফলাফলের বাস্তবতা সম্পর্কে নব্বই ভাগেরও বেশি সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়েছিল৷

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ফলাফলের ধারেকাছেও নেই৷ বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্ট ১৯৯৯ সালে ভারতের সিকিম রাজ্য সরকারের হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হাসনাইনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিল৷ জলবায়ু বিজ্ঞানী হাসনাইন বলেছিলেন, হিমালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ, হিমবাহগুলো একটা সময়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে৷ ড. হাসনাইন বর্তমানে দিল্লির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনার্জি রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটে (টিইআরআই) ফেলো হিসেবে কাজ করছেন৷ ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমালয়ের বরফ গলে যাবে এই মর্মে তাকে উদ্ধৃত করে ম্যাগাজিনটিতে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল সেটাকে তিনি ভুল বলে একটি ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছেন৷ সম্প্রতি তিনি তাঁর গবেষণার আলোকে বলেছেন, হিমালয়ের হিমবাহ নিঃশেষের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন৷ এজন্য কমপক্ষে এক দশক অপেক্ষা করতে হবে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমবাহের অংশবিশেষ পুরোপুরি নিঃশেষ হতে পারে৷

রাজেন্দ্র কুমার পাচৌরির নেতৃত্বাধীন এই প্যানেল এখন স্বীকার করছে যে, হিমালয় সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনের উপসংহারে পৌঁছাতে যথাযথ গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি৷ পাচৌরি বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমবাহগুলো নিশ্চিহ্ন হতে পারে বলে পূর্বাভাষ দেয়ার ফলে সম্ভবত অনেক লোক সত্যিকার অর্থেই সতর্ক হয়েছেন৷ তবে, হিমালয়ের হিমবাহের অস্তিত্বের প্রতি প্রকৃত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কল্পনাপ্রসূত ওই প্রতিবেদন নিয়ে প্যানেল কর্তৃপক্ষ তিরস্কার ও সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ মনে করা হয় যে এটা ছাপা সংক্রান্ত কোন ভুল হলেও হতে পারে৷ কিন্তু ভারত সরকারের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনায় ভ্রূক্ষেপ করলেন না পাচৌরি৷ দ্বিতীয়বারের জন্য ওই প্রতিবেদন পরীক্ষা করতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন না৷ কিন্তু সমালোচনার দাবানল ক্রমশই বাড়তে থাকে৷ যে কারণে আইপিসিসি কো-চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফার ফিল্ড বলেছিলেন, আইপিসিসি এটাকে গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে এবং যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটি সমাধান দেয়ার জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি৷

প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক