হিমালয়ের ছায়ায় হুমকিতে পরিবেশ
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮পরিবেশবিদদের ধারণা, এই বন্যায় পানি, কাদা ও পাথরের ঢল নামতে পারে৷ সেই ঢল নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের জনঅধ্যুষিত সমতল, রাস্তাঘাট, গ্রাম, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে৷
পরিবেশবিজ্ঞানী অরুন ভক্ত শ্রেষ্ঠ'র মতে, ‘‘দিন দিন ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে৷ এই ভূখন্ডে বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে অবকাঠামো৷'' বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন তিনি৷
গত কয়েক দশকে হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে শত শত লেক তৈরি হয়েছে৷ ২০১৪ সালের এক জরিপ বলছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪শ' ৬৬টি লেক তৈরি হয়েছে৷ এর মধ্যে ২১টি বিপজ্জনক৷
নেপালের পানি ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের মহাপরিচালক ঋষি রাম শর্মা বলেন, ‘‘ছোট দেশ হিসেবে হিমবাহ থেকে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার খুব অল্পই আমাদের ঠেকানোর সামর্থ্য আছে৷''
বিপজ্জনক লেকগুলোর একটি সুর্কে গ্রামের ইমজা৷ অদ্ভুত সুন্দর এই লেকটি এক সময় বিপজ্জনক ছিল না৷ ১৯৮০ সালে লেকটি অনেক ছোট ছিল৷ ২০১৪ সাল নাগাদ এর আয়তন বেড়েছে তিনগুণ৷ ৫০১০ মিটার উঁচুর এই লেকটির পানি খুব বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে করছেন না পরিবেশবিদরা৷
২০১৫ সালে নেপাল ভূমিকম্পের সময় সুর্কে গ্রামের অধিবাসীরা ধরেই নিয়েচিলেন যে, লেকটি থেকে পানি উপচে পড়বে এবং তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে৷
গ্রামের অধিবাসী ফুদোমা শেরপা বলেন, ‘‘আমরা তো ভয়ে দৌঁড়ই দিয়েছিলাম৷'' তবে আশ্চর্যজনকভাবে লেক থেকে পানি গড়ায়নি৷ ১২ হাজার মানুষ বেঁচে গেছেন৷
কিন্তু এই ভূমিকম্পে নড়ে চড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ৷ এখন খোঁজা হচ্ছে কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করা যায় তার উপায়৷ এরই মধ্যে লেকের পানি সরিয়ে নেবার বিশাল যজ্ঞ শুরু করা হয়েছে৷ একটি চ্যানেল দিয়ে পঞ্চাশ লাখ কিউবিক মিটার পানি সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ এতে লেকের পানির উচ্চতা কমেছে সাড়ে তিন মিটার৷
তবে এ ধরনের প্রকল্পের খরচ অনেক৷ হিসেব করে দেখা গেছে, পানি সরিয়ে নেয়ার এই প্রকল্পের খরচ ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি নামের একটি আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রকল্পের ৮০ ভাগ খরচ দেয়া হয়েছে৷ বাকিটা দিয়েছে ইউএনডিপি৷
তবে শুধু লেক ইনজাই নয়, এমন অসংখ্য লেক নেপালের জন্য বিরাট আকারের পরিবেশ সংকট তৈরি করছে৷ এ থেকে বের হবার জন্য নেপালকে আরো বড় আকারে প্রতিরক্ষা ও অভিযোজন প্রকল্প নেয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
জেডএ/এসিবি (এএফপি)