হিন্দুত্ববাদীদের নির্বাচনি ভাষণ
২৩ এপ্রিল ২০১৪প্রশ্ন হলো, তবে কি হিন্দু অ্যাজেন্ডাকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন মোদী?
প্রথমে বিহারের বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিং এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা শুধু বিতর্কিত নয়, বিস্ফোরকও বটে৷ কী বলে ছিলেন তিনি? বলেছিলেন মোদীকে যাঁরা ভোট দেবে না আগামী দিনে তাঁদের স্থান হবে ভারতে নয়, পাকিস্তানে৷ এরপর আরো একধাপ এগিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি প্রবীণ তোগাড়িয়া হিন্দু মৌলবাদী বজরং দলের কর্মীসভায় নাকি বলেছেন, হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলিমদের ঘর বাড়ি কিনতে দেয়া হবে না৷ গুজরাটের আমেদাবাদে উপদ্রুত এলাকা আইনে এমনটাই বলা আছে, দাবি করেন তোগাড়িয়া৷ হুমকি দেন তিনি যে, হিন্দু প্রধান পাড়ায় মুসলিমদের বাড়ি খালি করে চলে যেতে হবে৷ নাহলে বজরং দলের কর্মীরা বাড়ি দখল করে নেবে এবং বজরং দলের স্টিকার লাগাবে৷ এই ধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবার অভিযোগে তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়৷ তোগাড়িয়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন৷
আসল কথা মোদী কেন নীরব? তিনি তো নির্বাচনি প্রচারে উন্নয়ন ও সুশাসনকেই করেছেন পাখির চোখ৷ ভোট যখন অর্ধেকের বেশি আসনে হয়ে গেছে তখন তিনি তাঁর দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলিকে ভোটের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিতে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিচ্ছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট বিজেপির ঝুলিতে ভরতে৷ জেডি (ইউ) মুখপাত্র অজয় অলোক মনে করেন, এইসব বিদ্বেষমূলক বিবৃতি নির্বাচনি পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে৷ মোদীর বিরুদ্ধে ভোট দিলে ভারতে জায়গা হবে না বলে ভোটারদের যেভাবে সংঘ পরিবার হুমকি দিচ্ছে তা ভারতের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে তুলবে৷ মোদী এখন ভালো মানুষ সাজতে চাইলেও গোহত্যা ও গোমাংস রপ্তানি নিষিদ্ধ করার মত বিতর্কিত উক্তি করেছেন তিনি৷ এমনকি, মুসলিমদের তোষণ করছেন বলে যাতে কেউ আঙুল তুলতে না পারে, তার জন্য মোদী মুসলিম স্কাল-ক্যাপ পরতে অস্বীকার করেন৷ এমনকি মোদীর ডানহাত অমিত শাহ উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরের দাঙ্গার বদলা নেবার কথা বলেছেন৷ মোদী যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এইসব সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সহিংস আকার ধারণ করতে পারে, এমনটাই নাগরিক সমাজের আশঙ্কা৷
কংগ্রেসও বিদ্বেষ বিষ থেকে মুক্ত নয় পুরোপুরি৷ কংগ্রেসের ইমরাণ মাসুদ প্রকাশ্যে রাহুল গান্ধীর জ্ঞাতসারে বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেছেন মোদীকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে, এমনটাই শোনা গেছে৷ এটাও শোনা গেছে রাহুল তার প্রতিবাদ করেছেন৷ বিহার বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং-এর উক্তি টেনে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তানে যেতেও রাজি, তবু মোদী বিরোধীতা থেকে পিছু হটবেন না৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার প্রতিক্রিয়া, এই ধরণের মানসিকতার ফলেই পাকিস্তান হয়েছে, বিজেপি এই মানসিকতা না বদলালে আর একটা ‘নতুন পাকিস্তান' জন্ম নিতে পারে৷ যাঁরা মোদী বিরোধী তাঁরাই পাকিস্তানের সমর্থক, এটা শুধু হাস্যকরই নয় নোংরা চিন্তাভাবনা, বলেন ফারুক আবদুল্লা৷