হাসপাতাল খোলা, ডাক্তার নাই
৯ এপ্রিল ২০২০বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো খোলা পাওয়া গেছে৷ এরমধ্যে মোহাম্মদপুরের তিনটি ক্লিনিকে পাওয়া গেছে শুধু রিসেপশনিস্ট ও কয়েকজন নার্স৷ পাওয়া যায়নি কোন চিকিৎসক৷ তারা জানিয়েছেন রোগী এলে ডাক্তারকে ফোন করা হলে তারা হাসপাতালে আসেন৷ তবে এর আগে রোগীর সমস্যা তারা জেনে নেন৷ সর্দি কাশি থাকলে কোনো কথা না বলে সরাসরি বিদায় করে দেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে রোগীদের কাছ থেকে৷
ধানমন্ডি ও কলাবাগানের তিনটি নামকরা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে গিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে৷ সেখানে ডিউটি ডাক্তার থাকলেও তারা রোগের লক্ষণ শুনে চিকিৎসক নেই বলে জানিয়ে দেন, পরে যোগাযোগ করতে বলেন৷ কেউ কেউ ফোন নাম্বার রেখে দিয়ে বলেন ডাক্তার আসলে যোগাযোগ করা হবে৷ এসব হাসপাতাল থেকে অনেককেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে৷ একটি ক্লিনিক থেকে একজন হাঁপানির রোগী ফিরে যাওয়ার সময় বলেন, ‘‘আগে হাসপাতালই খোলা থাকতো না, আর এখন খুললেও ডাক্তার নেই৷’’
বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার, প্রসূতি মায়ের সেবা, দুর্ঘটনায় আহতসহ অন্যান্য নিয়মিত রোগের চিকিৎসা মিলছে না বলে রোগীরা অভিযোগ করছেন৷ সরকারি হাসপতালগুলোর জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও বহির্বিভাগ থাকে আধাবেলা৷ ফলে সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীরা কোথায় যাবেন এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না৷ সাধারণ জ্বর এবং সর্দির জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতালে একটি আলাদা ‘ফিভার ক্লিনিক' খোলা হলেও সেখানে বেজায় ভীড়৷ সবার পক্ষে তাই সেবা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ছয়টি হাসপাতাল ঢাকায় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ সেখানেও তেমন রোগী নেই৷ কেউ নিশ্চিতভাবে করোনা আক্রান্ত না হলে সেসব জায়গায় ভর্তি করানো হচ্ছে না৷ অন্যদিকে সাধারণ হাসপাতালে গেলে বলে রোগীরা ডাক্তার পাচ্ছেন না অথবা শর্ত দিচ্ছেন করোনা পরীক্ষার৷
এরকম অভিজ্ঞতার কথাই জানালেন ঢাকার রাসেল আহমেদ৷ তিনি তার ক্যান্সার আক্রান্ত বড় ভাই মো. আলম হোসেনকে কেমোথেরাপি দিতে বুধবার প্রথমে নিয়ে যান জেনারেল হাসপাতালে৷ সেখানে তার রক্ত পরীক্ষার পর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়৷ রাসেল জানান এই সমস্যা আগেও ছিল, ওষুধ সেবন করলে তিনি ভাল হয়ে যান৷ কিন্তু জেনারেল হাসপাতাল একারণে তার ভর্তি নিতে অস্বীকার করে৷ তিনি বলেন, ‘‘এরপর গেলাম ডেলটা হাসপাতালে, সেটা লকডাউন৷ তারপর গেলাম আহসানিয়া মিশন হাসপতালে, তারা ভর্তি নিল না৷ বলল, আগে করোনা টেস্ট করে আসেন৷ এরপর আমরা উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে যাই৷ সেখানে করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসে বৃহস্পতিবার সকালে৷’’ এই রিপোর্ট দেখিয়ে ভাইকে এখন কোনো একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে চান রাসেল৷
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান জান্নাতুল ফেরদৌসি মানু৷ তিনি একমাস ঘুরে তার ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের জন্য কেমোথেরাপির তারিখ পেয়েছেন৷ সোহারোওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দাবি করেন, ‘‘সরকারি হাসপাতাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই৷ সমস্যা হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়ে৷ আর চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ করে দিয়েছেন৷ আমাদের দেশের লোকজন যে কারণেই হোক প্রথমেই প্রাইভেট ক্লিনিকে যায়৷ আর চিকিৎসা না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়ায়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘন্টা (হাসপাতাল) খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে এটা ভালো৷ কিন্তু প্রাইভেট হাসপতালের জন্য এই সময়ে কোনো নীতিমালা করে দেয়া হয়নি, ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রাইভেট হাসপাতালগুলো খুলেছে, কিন্তু চিকিৎসক নেই৷ তাদের একটা গাইডলাইন দিতে হবে তারা কখন কোন রোগী দেখবেন৷’’
এদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এর অধীনে ৬৯টি হাসপাতাল ২৪ ঘন্টাই খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান৷ তিনি আরো বলেন, করোনাসহ কোনো রোগীকেই ফেরানো হবে না৷ করোনা হলে তাদের নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠানো হবে৷