হালাল অর্থনীতিতে ভিত্তি গড়ছে ইন্দোনেশিয়া
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯হালাল খাবার, হালাল ফ্যাশন, শরিয়া ব্যাংকিং, হালাল আবাসনসহ নানা খাতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ব্যবসা-বাণিজ্যকে চাঙ্গা করে তুলেছে তারা, যারা প্রভাব পড়েছে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও৷
ইন্দোনেশিয়ার এমটিভির সাবেক ভিডিও জকি অরি অ্যান্টুং বলেন, তিনি নিয়মিত মদ পান করতেন, জিনস পরতেন, চুল স্পাইক করতেন এবং নামে মাত্র মসুলমান ছিলেন৷
‘‘কিন্তু ইসলামের রক্ষণশীলরা অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালান৷ যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মুসলিম দেশের ভিত্তি অর্জন করে ফেলে ইন্দোনেশিয়া এবং এর অর্থনীতিতে এটা পরিবর্তন আনে৷ আমি নিজেও এখন ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী মুসলিমদের জন্য প্রার্থনা উৎসবের আয়োজন করি৷''
অন্টুং বলেন, সামাজিক পরিবর্তনগুলোকে মাথায় রেখে আবাসন থেকে শুরু করে শরিয়া ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷
ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারে যৌথভাবে দুই কোটিরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে এমন সেলিব্রিটিরাও ইন্দোনেশিয়ার ‘হিজরত' আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন৷ অন্টুংয়ের মতে, ইসলামী অর্থনীতিকে আরও মূলধারায় আনার লক্ষ্য নিয়ে এটা করা হয়েছে৷ মক্কার উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনা ছেড়ে যাওয়াকে মুসলিম ধর্মে হিজরত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে৷
ইন্দোনেশিয়ার ২১৫ মিলিয়ন মুসলিম ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপন্থি এবং তাদের বিশ্বাসে প্রায়ই স্থানীয় রীতিনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷
অলাভজনক শরিয়াহ অর্থনীতি সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল অডি সেতিয়াদি বলেন, রক্ষণশীলদের সংখ্যা এখন বাড়ছে এবং ফলে সংস্থাগুলোও ইসলামিক ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং পদ্ধতি বেছে নিয়েছে৷
‘‘রেস্তোঁরাগুলো তাদের হালাল প্রশংসাপত্র সুরক্ষার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে তারা বোঝাতে চায় তারা ইসলামী আইন মেনে চলে৷ এখন এমনও হাসপাতাল রয়েছে যেখানে ওষুধগুলো যে হালাল উপদানে তৈরি করা হয়েছে তাও বলা হচ্ছে৷ জাপানি কোম্পানি শার্পও হালাল লেবেল লাগিয়ে রেফ্রিজারেটর বিক্রি করে৷''
অডি সেতিয়াদি বলেন, ‘‘ইন্দোনেশিয়ায় জন্মসূত্রে অনেক মসুলমান যুবক নিয়মিত উপার্জন করেন এবং তারা ইসলামী ভাবধারায় জীবনযাপন করতে চান৷ তারা কতটা ব্যয় করবেন তা নিয়ে তারা ভাবেন না, তারা কেবল মনের শান্তি চান৷''
গত এপ্রিলে নির্বাচনের সময় মধ্যপন্থী মুসলিম রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো প্রবীণ রক্ষণশীল পণ্ডিত মাউরুফ আমিনকে তার সঙ্গে রাখেন৷ এতে পুনর্নির্বাচনের জন্য তার আরও বেশি মুসলিম ভোট পাওয়ার বিষয়টিকে সুরক্ষিত করেছিল বলে মনে করা হয়৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার ওলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমিন একদল আলেমকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী ব্যাংকিং এবং হালাল সদন বাধ্যতামূলক করাসহ ইসলামী অর্থনীতির বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷
থমসন রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মানুষ ২০১৯ সালে হালাল খাবার, পর্যটন, ফ্যাশন এবং প্রসাধনীর পেছনে ২১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে, ২০১৪ সালে যা ছিল ১৯৩ বিলিয়ন ডলার৷
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সম্পদ ছিল ৪৮৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়র রুপী, যা গত নয় বছরের থেকে ৩০০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধির সূচককেই নির্দেশ করে৷
ব্যাংক ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি গভর্নর দোদি বুদি ওয়ালুয়ো রয়টার্সকে বলেন, দেশটিতে হালাল খাবার, ফ্যাশন এবং ইসলামী পর্যটনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ শরিয়া অর্থনীতি অগ্রসরমান হচ্ছে এবং বাড়ছে হালাল পণ্য ও হালাল সনদের চাহিদা৷
কিছু আবাসন কোম্পানি মসুলামানদের, বিশেষ করে আয যিকরা সম্প্রদায়ের ৪০০ বাসিন্দাকে টার্গট করে মহানবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে হালাল আবাসনের কথা বলছে৷ সেই আবাসনের কেন্দ্রস্থলে একটি মসজিদ রয়েছে, যা লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির অনুদানের অর্থে নির্মিত৷
ইন্দোনেশিয়া ২০১৪ সালে কোনো পণ্য হালাল কি না, তা লেবেল করতে কোম্পানিগুলোকে বলেছিল৷ সেই পদেক্ষেপের অগ্রগিত না হলেও দেশটিতে এখন হালাল পণ্যের বিপণন মূল ধারায় চলে এসেছে৷
গত মাসে জার্কাতায় হালাল পণ্য নিয়ে প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এসওএস বিউটি নতুন ধরনের ফাউন্ডেশন ক্রিম নিয়ে আসে৷ নামাজের আগে ওযু করার বিধান তুলে ধরে এই কোম্পানির প্রতিনিধি লিসা বলেন, ‘‘এটি আপনার চামড়ার ছিদ্রগুলো বন্ধ করবে না, সুতরাং আপনি ওযু করলে পানি ঢুকবে৷''
গায়ত্রী সুরোও ও তাবিতা দোলা/এসআই/কেএম (রয়টার্স)