হার না মানা রেহানা ফাতেমা
৩০ অক্টোবর ২০১৮ভারতের সরকারি জনসংযোগ বিভাগ, বিএসএনএল-এর টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত রেহানা ফাতেমা দেখতে শুনতে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই৷ কিন্তু এরণাকুলাম নিবাসী ৩১ বছর বয়সি এই নারীর পরিচয় এখন আ শুধু ওইটুকুতে সীমাবদ্ধ নেই৷
বর্তমানে ভারতে খবরের শীর্ষে কেরালার শবরীমালা মন্দির৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশেষে ইতি টেনেছে কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞায়৷ কিন্তু তাতেও ফল হয়নি কিছুই৷ আদালতের রায়ের পরও কোনো নারীকে এই মন্দিরে ঢুকতে দেননি পুরোহিতসহ অন্যান্য মন্দিরের কর্মকর্তারা৷
গত ১৭ই অক্টোবর রেহানা ফাতেমা ও আরো কয়েকজন নারী পায়ে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছালেও তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷
ইতিমধ্যে, মুসলমান হয়েও হিন্দুদের মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করার ‘অপরাধে' ভাঙচুর করা হয়েছে ফাতেমার ঘর-বাড়ি৷ কেরালা মুসলিম জামায়াত কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও রেহানাকে একই অভিযোগে বহিষ্কার করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে৷
অনেকের মতে, রেহানা ফাতেমা একজন প্রচারমুখী মানুষ৷ তবে তাঁর সাহসের প্রশংসা না করে পারা যায় না৷ বিভিন্ন ইস্যুতে যেভাবে তিনি প্রতিবাদী হচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে ভাবতে বাধ্য করছেন, তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য৷
প্রতিবাদ করতে গিয়ে গোঁড়া হিন্দু এবং গোঁড়া মুসলমান দু' পক্ষেরই রোষের মুখে পড়েছেন তিনি৷
এ বছরের মার্চ মাসে কেরালার আরেকটি ঘটনায় খবরে এসেছিল ফাতেমার নাম৷ এক অধ্যাপক নারীদের স্তনের সাথে তরমুজের তুলনা করলে এর প্রতিবাদে রেহানা তরমুজ দিয়ে খোলা বুক আড়াল করে ছবি তুলেছিলেন৷ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে বিস্তর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন৷ এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য ফাতেমার জন্য নতুন কিছু নয়৷ ২০১৪ সালের বিতর্কিত ‘কিস অফ লাভ' আন্দোলনের সময় তাঁর সঙ্গী, চিত্রনির্মাতা মনোজ শ্রীধরের সাথে একটি চুম্বনের ভিডিও শেয়ার করেও তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ছিলেন তিনি৷
শবরীমালার ঘটনায় রেহানার কাজে তাঁর সহকর্মীরা নাকি অস্বস্তিতে পড়েছেন৷ এ কারণে তাঁকে নাকি বদলি করা হতে পারে৷
এত কিছু পরেও কিন্তু রেহানা বিন্দুমাত্র বিচলিত নন৷ গোঁড়া মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই দুই সন্তানের মা জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তিনি ধর্মের ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করেন৷
নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রেহানা স্বপ্ন দেখেন বিভিন্ন সামাজিক বেড়া ভেঙে একদিন নারীরা নিজেদের শরীর ও চেতনার ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে৷
এসএস/এসিবি