‘স্মার্ট’ নদীর বাঁধ
১০ এপ্রিল ২০১৮শহর এলাকার সুরক্ষার জন্য যে বাঁধ তৈরি করা হয়, তা কখনো-সখনো ভেঙে গিয়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে৷ এভাবে বাঁধ ভাঙা রোখার কোনো পন্থা আছে কি?
আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবার্ট মেইয়ের বললেন, ‘‘আমার পায়ের তলার মাটির নীচে যে ৪৮টি সেন্সর আছে, সেগুলো আমাদের একটানা জানাচ্ছে, বাঁধটা কীরকম রয়েছে আর বাঁধের ভিতরে কী চলেছে৷ এই প্রযুক্তির ফলে এই বাঁধটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘চালাক’ বাঁধ বলা চলে৷’’
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি গবেষণা প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে এই আন্ডারগ্রাউন্ড সেন্সরগুলি উদ্ভাবন করা হয়েছে৷ সেন্সরগুলি যে শুধু মাপজোক করে, শুধু তাই নয়; একাধিক দেশে সেই তথ্য পাঠাতে পারে৷ ইংল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত বস্টন শহর এই নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করার একটা বিশেষ স্থান – কেননা এখানে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে নদীর জল নাটকীয়ভাবে বাড়ে ও কমে, যার ফলে বাসিন্দাদের বিপদ দেখা দিতে পারে৷
যুক্তরাজ্যের পরিবেশ সংস্থার উপকূল উপদেষ্টা মার্ক রবিনসনের মতে, ‘‘বস্টনে সাগরের পানি রোখার কিছু ভালো ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু বাঁধগুলো খুব উঁচু নয়৷ কাজেই যখন জোয়ার আসে, তখন পানি বাঁধ ছাপিয়ে যেতে পারে৷ কাজেই ওটা একটা বড় ঝুঁকি৷’’
সেন্সরের ওপরেই সব কিছু নির্ভর
গবেষণায় নিযুক্ত প্রযুক্তিবিদরা নানা ধরনের সেন্সর তৈরি করেছেন, যেগুলো নির্ভরযোগ্য ও সস্তা; কাজেই ভেজা মাটির বাঁধে এ ধরনের সেন্সর লাগানো যেতে পারে৷
রোবার্ট মেইয়ের দেখালেন, ‘‘এটা হল একটা সেন্সর – স্টেনলেস স্টিলের আধারে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি লাগানো আছে৷ একটা ছোট ফুটো দিয়ে জল ঢুকতে পারে৷ সেন্সরটি তখন বাঁধে জলের পরিমাণ, মাটির নীচের তাপমাত্রা ও সেন্সরগুলির নড়াচড়া ইত্যাদি নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷’’
ইন্টারনেট থাকলে এই সব তথ্য সঙ্গে সঙ্গে কোনো না কোনো ডিভাইসে ফলো করা যায়৷ বস্টন শহরের একটি কাফেতে বসানো টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে জনতা দেখতে পারেন, প্রণালীটি কীভাবে কাজ করছে৷
বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তিবিদ আলেক্সান্ড্রা টপল বললেন, ‘‘এই সেন্সর ডেটা বিশ্লেষণ করে বাঁধের স্থিতিশীলতা যাচাই করা যায়৷ বাঁধে যে সব পরিবর্তন ঘটছে, তা থেকে বাঁধ ভেঙে পড়ার আগাম সতর্কতা পাওয়া যায়৷’’
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ফলে সেন্সরগুলি বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলিকে সতর্কতার নির্দেশ পাঠাতে পারে – পরিষেবার কর্মীরা হয়তো বাঁধের দুর্বলতা সম্পর্কে তখনো কোনো আঁচ পাননি৷
সেন্সর থাকার সুবিধা
মার্ক রবিনসন জানালেন, ‘‘বর্তমানে আমরা বাঁধ পরিদর্শনের উপর নির্ভর করি৷ বছরে দু'তিনবার কর্মীরা গিয়ে সরেজমিনে বাঁধ দেখে আসেন৷ কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তির ফলে আমরা বাস্তবিক বুঝতে পারি, বাঁধটা কীভাবে কাজ করছে, চাপের মধ্যে কীভাবে নড়াচড়া করছে, বাঁধে কোনো ফাটল দেখা দিয়েছে কিনা৷ বাঁধে কোনো কিছু ঘটলে তা আমরা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারি৷’’
সফটওয়্যার আঁকজোক করে বলে দেয়, বাঁধ ভাঙলে এলাকাটা কতো তাড়াতাড়ি ডুবে যাবে – এমনকি বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবার সেরা পন্থাটাও বাতলে দেয়৷ আলেক্সান্ড্রা টপল ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘এই প্রণালীতে আমরা সম্ভাব্য বন্যা এলাকা মানচিত্রটা দেখতে পাই; যা থেকে আমরা বন্যাপীড়িত মানুষদের বাঁচানোর একটা প্রোগ্রাম চালাতে পারি, যা থেকে মানুষজন স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটা দেখা যায় – আপৎকালীন প্রতিক্রিয়া কর্মীরা তা ব্যবহার করে বাঁধ ভাঙার ক্ষেত্রে বন্যপীড়িতদের স্থানান্তরিত করার সেরা প্রক্রিয়াটা বেছে নিতে পারেন৷’’
নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হলে ইউরোপ ও সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রণালী ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন শহর-নগরগুলিকে সুরক্ষিত করা চলবে৷