স্বতন্ত্রদের নির্বাচনি প্রচারে নৌকার প্রার্থীদের বাধা
২১ ডিসেম্বর ২০২৩পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচার মিছিলের আয়োজন করেও রেহাই পাচ্ছেন না তারা৷ অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা৷ কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ হামলাকারীদের আটক করছেন৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ এসেছে৷
সারা দেশে গত দুই দিনে অন্তত ২০টি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ভাঙচুর করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিসেও৷
চাঁদপুরের মতলবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য এম ইসহাক আহসান৷ তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া৷
ইসহাক আহসান অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি তার নিজ এলাকা কলাকান্দা ইউনিয়নে পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রচার মিছিল বের করেন৷ এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মায়া চৌধুরী সমর্থকেরা তার ২০-২৫ জন কর্মীকে অপহরণ করে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আটক করে মারধর করেন৷ এই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শোভা৷ পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘এর আগে আমার বড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ আমার এক কর্মীকে বুধবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে৷ সে এখন হাসাপাতালে আছেন৷ ওই চেয়ারম্যান এলাকায় মাইকিং করেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যে কাজ করবে তার চোখ উপড়ে ফেলবে৷ আমি একাধিক মামলা ও জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না৷ রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েও কোনো নিরাপত্তা পচ্ছি না৷''
এদিকে, ফরিপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ এ পর্যন্ত তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের শামীম হকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা ও জিডি করেছেন৷ তাতেও কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশ, নির্বাচন কমিশন সবখানে অভিযোগ করেছি৷ কোনো ফল পাচ্ছি না৷ এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই৷ আর কয়েকদিন দেখব, তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷''
বৃহস্পতিবারও তার লোকজনের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার কিষান গোপালপুরে পোস্টার লাগানোর সময় আমার দুই জন লোককে কুপিয়ে জখম করা হয়৷ এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ এ পর্যন্ত আমার কর্মী সমর্থকদের ওপর কমপক্ষে ২১ দফা হামলা হয়েছে৷ একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল৷ পরদিন ছাড়া পেয়েছে৷''
এর আগের দিন, বুধবারও তার একাধিক নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী৷
বুধবার চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে৷
পটুয়াখালী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবুল হোসেন আজাদের প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে৷
রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হকের প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
গাজীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
কুষ্টিয়া-৪, রাজশাহী-৪ এবং রাজশাহী-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সভায় হামলা হয়েছে বুধবার৷
ঝালকাঠির রাজাপুর-কাঠালিয়া আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘‘এখানে হামলার ঘটনা না ঘটলেও আমার নেতা-কর্মীরা নতুন করে চাপের মুখে পড়েছেন৷ বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে উপজেলা আওয়ামী লীগ বৈঠক করে প্রত্যাখ্যান করায় ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ আমার নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের হুমকির মুখে আছেন৷''
এই পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা সমর্থকদের ওপর হামলা হবে কেন? নির্বাচন তো বাংলাদেশে একটা উৎসবের ব্যাপার৷ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকলে তা স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিগত, সামাজিক বা পারিবারিক শত্রুতার কারণে ঘটতে পারে৷''
তার কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ৷ স্বতন্ত্রদের চাপে থাকার কোনো কারণ নেই৷''
তবে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা যেসব অভিযোগ পেয়েছি তার তদন্ত চলছে৷ দুই এক দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা দেখতে পাবেন৷ এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) তিন জন ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি৷ তাদের প্রত্যাহার করেছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে আমাদের যা করার সব করব৷''