আস্থার সংকটে সরকার
১২ জুলাই ২০১৩দু'দিন আগে বেলারুশ খেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কার্যক্রম নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন৷ বিদেশে বসেই তিনি পরাজয়ের খবর পান৷ এর আগে চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ে আশাহত হলেও খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি শাসক দল৷ কিন্তু গাজিপুরে পরাজয় তাদের ভাবিয়ে তুলেছে৷
তাই প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেই দলের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন৷ সেইসব বৈঠকের ফল হিসেবে শেখ হাসিনা একটি বিবৃতিও দিয়েছেন৷ বিবৃতিতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন৷ বলেছেন সকল ভেদাভেদ ভুলে দলের জন্য কাজ করতে৷ জানা গেছে, বৈঠকে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং কিছু নেতার ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়া বেশ কিছু জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক প্রচারণার জবাব দিতে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের লোকজন ব্যর্থ হয়েছে৷
সে কারণেই এসব দূর করে নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে চায় সরকার৷ একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে তারা জনপ্রিয় কিছু কাজ করতেও আগ্রহী৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সাম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই আত্মসমালোচনা করছে৷ ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে জনগণের এই দল অবশ্যই জনগণের পাশে থাকবে৷ আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, যাদের জন্য সরকারের এই অবস্থা তাদের অবশ্যই সরে যেতে হবে৷ তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যাবে না৷
তবে রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, সরকার এখন আস্থাহীনতার সংকটে পড়েছে৷ তাই তার অনেক ভালো কাজ থাকার পরও সেগুলো আমলে নিচ্ছেন না সাধারণ মানুষ৷ সাধারণ মানুষ চান আগামী সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়৷ তাই তাঁরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চান না৷ একাধিক জরিপেও দেখা গেছে যে, দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান৷ সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায়, সাধারণ মানুষের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে৷ তাই সরকারের উচিত হবে আগেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করা৷ সরকার যদি দেরি করে তাহলে সংকট আরো বাড়বে৷ কারণ, ঈদের পরে বিরোধী দল আন্দোলনে যাবেই ৷ তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ আর সরকার এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে হয়ত সরকারের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফিরে আসতে পারে, মনে করেন অধ্যাপক আহমেদ৷