বাংলাদেশিরা বন্ধুবৎসল, অতিথিপরায়ণ, পরোপকারী৷ এসব জ্ঞান তাদের যখন দিচ্ছি, তখন দেখি আমাদের গাড়ির অন্য পাশে এক অটোরিকশা দাঁড়িয়ে৷ আর সেই অটোরিকশা দিয়ে মুখ বের করে রেখেছে অল্প বয়সি এক বালিকা৷ তার ঠোঁটে লিপস্টিক, মুখভর্তি মেকআপ৷ প্রচণ্ড গরমে ঘামিয়ে উঠেছে বালিকা৷ ফলে মেকআপ, লিপস্টিক মিলেমিশে একাকার অবস্থা৷
আমাদের আলোচনা ক্রমশ সেই বালিকা ঘিরে শুরু হলো৷ আমি জানালাম এরকম বালিকা-কিশোরী-তরুণীদের মুখভর্তি মেকআপ কিংবা লিপস্টিক ব্যবহার করতে দেয়ার ঘোর বিরোধী আমি৷ কারণ এতে করে অল্প বয়সেই তাদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয় যে সুন্দর হতে হলে মেকআপ এবং লিপস্টিক অপরিহার্য ব্যাপার৷ আর এই ধারণা একসময় তাদের মনে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করবে যে মেকআপ ছাড়া সে দেখতে মোটেই সুন্দর নয়৷
আমার জার্মান সহকর্মী নাওমী কনরাড কোন কিছু বলার আগে কিছুটা সময় নেন৷ কিছুটা ভেবে নিয়ে তিনিও বললেন একান্ত চেহারার কোন খুঁত ঢাকতে না চাইলে কিংবা প্রফেশনের প্রয়োজনে দরকার না হলে মেকআপ আসলে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷
নাওমীর সঙ্গে আমিও একমত৷ আমি তখন ভাবতে শুরু করি, মানুষের সৌন্দর্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আমরা কি ক্রমশ একটা ভ্রান্ত ধারনা দিচ্ছি? ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করা এই প্রজন্মের মধ্যে নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে মেকআপ, ফেসঅ্যাপসহ নানা ডিজিটাল ফিল্টার ব্যবহারের তীব্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলে যে একটা কথা আছে সেটা মনে হচ্ছে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে৷
এতে অবশ্য লাভবান ব্যবসায়ীরা৷ উঠতি বয়সের মডেল কন্যাদের সাজ-পোশাকে নিত্য নতুন পরিবর্তন এনে তাদের অনুসারী প্রজন্মকে সেসব সাজপোশাক কিনতে বাধ্য করার এই প্রবণতায় বড় ভূমিকা পালন করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যম৷ বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে জাস্টিন বিবার, কেইলি জেনার কিংবা আরিয়ানা গ্রান্ডের মতো তারকাদের অনুসরন না করলে আপনি যেন অনেকটা সমাজচ্যুতই হয়ে যাচ্ছেন৷
আমার মনে হয় এই পরিস্থিতির একটা পরিবর্তন দরকার৷ আর সেই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজেদের স্বকীয়তা, সামর্থ্য আর সৌন্দর্য্যজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া উচিত৷ একজন বাংলাদেশি মেয়ের গড় উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি বা একজন পুরুষের উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ আর এই স্বাভাবিকতাকে মেনে নিয়ে শ্যামলা কিংবা মোটা যেকোন অবস্থাতেই নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন সম্ভব৷
ফর্সা মানেই সুন্দর কিংবা লম্বা মানেই সুপুরুষ - এগুলো ব্যবসায়ীরা নানাভাবে আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে৷ যেকারণে দেশে ফেয়ার এন্ড লাভলি কিংবা হরলিকসের এত কদর৷ আদতে আপনি আপনার জন্মগতভাবে প্রাপ্ত শারীরিক রং, উচ্চতা নিয়েই সুন্দর হতে পারেন৷ আর সেজন্য দরকার আত্মবিশ্বাস৷ আমাদের বিজ্ঞজনদের উচিত বাঙালির সেই আত্মবিশ্বাসে আঘাত না হেনে বরং উৎসাহিত করা৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷