সৌদি আরবে শ্রমবাজার উন্মুক্ত
১২ আগস্ট ২০১৬বুধবার সৌদি সরকারের শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ওপর সাত বছর ধরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এই ঘোষণা দেয়৷ শ্রম ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সুখবর৷ একইসঙ্গে যেসব শ্রমিক সেখানে যাবেন, তাঁদের বেতন-ভাতা, নিরাপত্তাসহ সার্বিক স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে ভাবতে হবে যাতে কোনো শ্রমিক সেখানে গিয়ে বিপদে না পড়েন৷ কেউ বিপদে পড়লে আমাদের দূতাবাস যেন তাঁদের পাশে দাঁড়ায়৷ জনবল কম, এমন অজুহাত দিয়ে যেন হাত-পা গুটিয়ে তারা বসে না থাকে৷''
সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুখবর উল্লেখ করে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানান, ‘‘গত জুনে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সউদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ঐ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল৷ এটি তার ফল৷''
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব৷ দেশটিতে সরকারি হিসাবে বর্তমানে সেখানে ১৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন৷ এঁদের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার নারী গৃহকর্মী৷ এর বাইরে আরো অন্তত পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন, যাঁদের বৈধ কাগজপত্র নেই৷ অথচ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজার দীর্ঘকাল বন্ধ ছিল৷ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি আরব৷ সেক্ষেত্রে গৃহকর্মী খাতের ১০টি ক্যাটাগরিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়৷ দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতি মাসে গৃহকর্মী খাতে ১০ হাজার কর্মী নিতে চায় তারা৷ এরপর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬ হাজার বাংলাদেশি নারী শ্রমিক সৌদি আরবে গেছেন৷ গেল বছর ৬০ হাজার আর এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রায় এক লাখ কর্মী গেছেন, যাঁদের অধিকাংশই নারী৷
গত বছরই সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে৷ এর প্রায় দেড় বছর পর সৌদি সরকার নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিল৷ বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সৌদি আরবে প্রায় সকল পেশায় বাংলাদেশি দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকরা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মাধ্যমেও সৌদি আরবে কর্মী যাবেন৷ তবে এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে জানা গেছে৷
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ টেলিফোনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরব বুধবার থেকেই তাদের কম্পিউটার খোলা রেখেছে এবং এখন সৌদি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার জন্য আবেদন করবে৷ তবে এই সুযোগে যাতে বাংলাদেশের কোনো অসৎ রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিতে না পারে, সেজন্য তিনি কঠোর মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন৷
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বৈঠক করেন সৌদি শ্রমমন্ত্রী মুফরেজ আল-কাহাবানি এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম৷ সেই বৈঠকে বাংলাদেশি গৃহকর্মী প্রেরণের সংখ্যা বাড়াতে একমত হয়েছিলেন তাঁরা৷ একইসঙ্গে অভিবাসন খরচ কমাতে, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দু'দেশের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় আরো বেশি পুরুষ কর্মী প্রেরণসহ কর্মী রপ্তানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতেও তাঁরা সম্মত হন৷
সৌদি আরবে বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিঃসন্দেহে ভালো খবর৷ কিন্তু এখন এর সুফল নির্ভর করছে জনশক্তি সরবরাহের ওপর৷ জনশক্তি রপ্তানিকারকরা ভালো মানসম্পন্ন শ্রমিক সরবরাহ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে৷ শ্রমিকদের যোগ্যতা, দক্ষতা যাচাই-বাছাই করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে৷ বাংলাদেশি শ্রমিকরা খুবই বুদ্ধিমান, কঠোর পরিশ্রমী এবং অধিক প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো করতে পারবে৷
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘‘এখন সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হতে হবে৷ সেখানে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বেতন উল্লেখ থাকতে হবে৷ লেখা থাকতে হবে যে, এর নীচে কেউ বেতন দিতে পারবেন না৷ আর যদি কেউ ঐ বেতনের কমে অভিবাসীদের পাঠান, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ সারা বিশ্বে তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে সৌদি আরবেই ‘সৌদিকরণ' হচ্ছ৷ তারা তাদের লোকদেরই কোম্পানিতে চাকরিতে পাঠাচ্ছে৷ এ অবস্থায় বাংলাদেশের অভিবাসীরা সেখানে গিয়ে কী পরিমাণ বেতন পাবেন, সেটা দেখার বিষয়৷''
বন্ধু, আপনিও কি সৌদি আরবে কাজ করতে চান? অথবা আপনার কি সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷