1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সৌদিতে সংস্কার, নাকি ক্ষমতার খেলা?

২৮ জুন ২০২১

সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ তবে এসব পরিবর্তনের লক্ষ্য কি সমাজে পরিবর্তন আনা, নাকি এটি ক্ষমতা বাড়ানোর আরেকটি কৌশলমাত্র?

https://p.dw.com/p/3vgYm
Saudi Arabien | Kronenprinz Mohammed bin Salman
ছবি: Amr Nabil/AP Photo/picture alliance

চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবে একটি আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ফলে এখন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী তার বাবা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারবেন৷

এর কিছুদিন পর আরেক ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে মেয়েরা মক্কায় হজ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারবেন৷ সেজন্য তাদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়বেনা৷ চাইলে অন্য মেয়েদেরও সঙ্গে নেয়া যাবে৷

চলতি সপ্তাহে সৌদি সরকার বিদেশ থেকে বই ও ম্যাগাজিন আমদানির নিয়ম সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ অর্থাৎ আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সেন্সরশিপের যে নিয়ম ছিল সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷

এর আগেও সৌদি আরবে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০' ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷

সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷

Saudi Arabien | Kino
ছবি: Amr Nabil/AP Photo/picture alliance

কোনো কিছু স্পর্শ করছে না, সবকিছু পরিবর্তন করছে'

ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি থিংক ট্যাংক ‘দ্য কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস' এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ের ভিজিটিং ফেলো ইয়াসমিন ফারুক ও সিনিয়র ফেলো নাথান ব্রাউন সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যা তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে৷ শিরোনাম- ‘সৌদি আরবের ধর্মীয় সংস্কার কিছু স্পর্শ করছে না, কিন্তু সবকিছু পরিবর্তন করছে'৷

তারা বলছেন, এই যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই অর্থপূর্ণ পরিবর্তন নয়৷ এগুলো আসলে প্রক্রিয়াগত, আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত পরিবর্তন৷ তারা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো এই পরিবর্তনগুলো আবার বাতিল করে দেয়া যেতে পারে৷

ফারুক ও ব্রাউন লিখেছেন, এই পরিবর্তনগুলো মোহামেদ বিন সালমানের ক্ষমতা বাড়ানো ও তার প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করার কেবল আরেকটি উপায় বলে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে৷

শুধুমাত্র প্রোপাগাণ্ডা?

সামাজিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসলেও সৌদি শাসকেরা কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সেই বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা থেকে গেছে৷

সৌদি সরকারের সমালোচকরা বলেন, সামাজিক উদারতা ও রাজনৈতিক উদারতার মধ্যে পার্থক্য এখনও একটি সমস্যা৷ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা সৌদি আরবে চলা কয়েকটি ভণ্ডামির উদাহরণ তুলে ধরেছে৷ যেমন গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া নারী অ্যাক্টিভিস্টদের এখনও জেলে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কমানোর অঙ্গীকার করার পরও দেশটি এখনও মৃত্যুদণ্ড দেয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ৷

বার্লিনের ইউরোপিয়ান সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষক দুয়া ঢায়নি বলছেন, সৌদি আরবে যে সংস্কারগুলো করা হচ্ছে তার প্রভাব আছে, তবে তা সীমিত৷ ‘‘কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তবে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ব্যবহার কিংবা বাকস্বাধীনতা বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি,'' বলেন তিনি৷ ঢায়নি বলেন, ‘‘এই পরিবর্তন (সংস্কারগুলো) মানবাধিকার বিষয়ে অর্থপূর্ণ উপায়ে প্রভাব ফেলেনা, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো শুধুই প্রোপাগাণ্ডা৷''

ক্যাথরিন শায়ের/জেডএইচ