‘সেনা মোতায়েন আস্থা বাড়াবে ভোটারদের'
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮গুলিস্তানের মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বসেছে সেনা ক্যাম্প৷ সকালে সেখানে গিয়ে বাইরে থেকে দেখা গেল, সেনা সদস্যরা হকি স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রয়োজনীয় গোছগাছ করছেন৷
গেটে দাঁড়ানো দু'জন সদস্য বললেন, ‘‘নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি৷'' তবে উর্ধতন কর্মকর্তারা সে সময় উপস্থিত না থাকায় এর বেশি কিছু জানা যায়নি৷
ততক্ষণে প্রায় সারা দেশে সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা হয়ে গেছে বা কোথাও কোথাও প্রক্রিয়া চলছে৷ নির্বাচনের পর ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা৷ ৩৮৯টি উপজেলায় কাজ করবে সেনাবাহিনী৷ এছাড়া উপকূলীয় ১৮টি উপজেলায় কাজ করবে নৌবাহিনী এবং সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলায় কাজ করবে বিজিবি৷ নির্বাচনের কাজে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার ও পরিবহণ বিমান ব্যবস্থা রাখবে বিমানবাহিনী৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে জানানো হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে সশস্ত্র বাহিনী তাঁদের টহল ও অন্যান্য অভিযান পরিচালনা করবে৷ তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে৷ ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে কমিশন্ড অফিসারের নির্দেশে যে কোনো অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ ও সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন তারা৷
সেনাবাহিনী মাঠে নামায় মানুষের মধ্যে আস্থা আরো বাড়বে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা৷
সোমবার সকালে রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা৷''
সহিংসতার পথ পরিহার করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান৷
এদিকে, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টও এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে৷
ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনী জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না অথবা কোনো ব্যক্তি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না৷''
তাদের এই বিবৃতিতে স্থানীয় গণমাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ‘‘সেনা মোতায়েনের বিষয়টি রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে৷''
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক মনে করেন, নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের রেওয়াজ পুরোনো৷ তবে এবার বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে,
‘‘কারণ পুলিশকে ইদানীং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর বদলে অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় কর্মীর ভূমিকায় দেখা গেছে৷'' সেনা মোতায়েনের ফলে এ ‘পরিস্থিতি'র উন্নতি ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
‘‘সেনাবহিনী মোতায়েন হওয়াতে আমার ধারণা আগামী দুএকদিনের মধ্যেই নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে৷ ফলে বহু ভোটার ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে যাবেন বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে,'' যোগ করেন শাহদীন মালিক৷
জনগণের আস্থা বাড়ার আশা করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আস্থা বাড়বে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরও৷ আর জনগণের ভোটকেন্দ্রে যাবার আগ্রহ বাড়বে৷''