সেনা কর্মকর্তার ঘরে নিপীড়িত শিশু
৩ জুলাই ২০১৭শিশুটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার নেয়া হলেও পরে সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়৷
এ ঘটনায় শিশুটি গৃহকর্তীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ঢাকায় ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে৷
এই ঘটনায় একাধিক পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে৷ বিচারের দাবিতে কী বোর্ড ধরেছেন অসংখ্য মানুষ৷
এক সাংবাদিককে উদ্বৃত করে শামীম আরা নীপা নামে এক ব্যক্তি রবিবার ফেসবুকে জানিয়েছেন, সাবিনা নামের ওই শিশুটির শিশুটির পরিচয় এবং ঘটনার বিবরণও তিনি পূর্ণভাবে জানেন না৷
তবে পোস্টের সঙ্গে তিনি তিনটা ছবি দেন যার প্রত্যেকটিতেই নির্যাতনের চিহ্ন ছিল স্পষ্ট৷
ছবিতে দেখা যায় মেয়েটির দুই চোখ, চোখের পাতা এবং চোখের নীচের অংশে বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে ফুলে গেছে৷ ফোলা অংশগুলো কালো হয়ে গেছে এবং ফোলার কারণে ভেতরে ঢুকে গেছে চোখ৷ এছাড়া হাতে রয়েছে পুড়ে যাওয়ার দাগ৷ যার এক অংশ থেকে চামড়াও উঠে গেছে৷
ডিমপোচ ঠিকমতো করতে না পারায় বেলুন দিয়ে বেধড়ক পেটানোয় এই হাল হয়েছে বলেও ঢাকার একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে৷
ছবি দেখেই শামীম আরা মন্তব্য করেন, ‘‘যারা এমন পাশবিক কাজ করে তাদের আদৌ কোনো বিচার হবে কিনা জানি না....খুব ক্রোধ হচ্ছে, ঘেন্না হচ্ছে এই সমাজের সেইসব পশুদের উপর যারা প্রতিদিন শিশুদের উপর এমন নির্যাতন করে এবং বিনা বিচারে টাকা কিংবা ক্ষমতার বিনিময়ে শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে যায়...৷ আমার শুধু শিশুটির চেহারার জায়গায় নিজের সন্তানদের মুখ ভেসে উঠছে....খুব বীভৎস লাগছে...৷''
এই অপরাধের বিচারের পথটা যে সহজ হবে না – সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ সবের সুবিচার আদায় করে নেয়া লাগে, কিন্তু কে করবে সেই আন্দোলন...?
ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার প্রথম ১৬ ঘণ্টায় প্রায় ১৫শত বার শেয়ার হয়েছে এই পোস্টটি৷ এছাড়া নিজ নিজ স্ট্যাটাসে আরও শত শত মানুষ এটাকে উদ্বৃত করেছেন৷
বকুল রায় বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়ে আমরা আর কত মানুষের জীবন বিপন্ন করব? পৃথিবীর কোনো প্রাণী সমগোত্রীয় ছোটদের এভাবে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে না৷ বরং বিপদে সবাই একত্রে প্রতিরোধ গড়ে৷ সমাজের উচুঁ স্তরের মানুষেরা আর কত অমানুষ হবি তোরা?
প্রকাশক রবিন আহসান তার ফেইসবুকে বলেন, বাংলাদেশে গরিব নারী শিশুরা সব চেয়ে অসহায়! যখন স্কুলে যাওয়ার কথা তখন তারা অন্যের শিশুদের বড়দের মতো আগলে রাখে! অন্যরা যখন খেলে তখন তার হাতে বড় সাহেব বিবিদের পুরো সংসার!
‘‘বড় সাহেব-বিবিদের মন মেজাজ খারাপ থাকলে সকল ধাক্কা এই নারী শিশুর উপর দিয়ে যায়! আর ও ছোট্ট মানুষ হিসেবে একটু আধটু ভুল করলে বিবিদের গরম খুনতি নারী শিশুর শরীরে অনিবার্য হয়ে পরে!''
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই আসিফ ইকবালকে উদ্বৃত করে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোমবার দেয়া এক খবরে বলা হয়, সাবিনা আক্তার নামে মেয়েটির বয়স ১১ বছর, বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়৷ গত ছয় মাস ধরে মিরপুর ডিওএইচএস-এ লেফটেন্যান্ট কর্নেল তসলিম আহসানের বাসায় কাজ করছিল সে৷
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘সাবিনাকে প্রায়ই মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী আয়েশা লতিফ৷ রবিবার মারধরের এক পর্যায়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়৷'
অভিযোগের বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তসলিম আহসান বা তাঁর স্ত্রী আয়েশা লতিফের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি৷
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর ) পরিচালক রাশেদুল হাসানকে উদ্বৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেছে, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছে৷ ভুক্তভোগীকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে৷ কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
সংকলন: সুলাইমান নিলয়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ