সুফি উৎসব
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২যদি ভাল করে শুনে থাকেন, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা থেকে আসা ফকির - দরবেশদের এই গানের মধ্যে বাঁশি, দোতারা আর ডুবকির সঙ্গে শুনে থাকতে পারেন পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ান, স্যাক্সোফোন আর ট্যাম্বুরিনের সুর৷
ঘটনাটা যা ঘটল, কলকাতার আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের উল্টো দিকে, মোহরকুঞ্জের সাজানো বাগানে, যেখানে বসেছিল তিন দিনের সুফি গানের আসর, দ্বিতীয় দিন সকালে সেখানে চলছিল শিল্পীদের ওয়ার্কশপ৷ সুফি উৎসবের উদ্যোক্তারা বলেন, প্রতি সন্ধ্যার নিয়মিত সংগীত অনুষ্ঠান ছাড়াও, বিভিন্ন দেশের লোকসংগীত শিল্পীরা যাতে নিজেদের মধ্যে সুর বিনিময় করতে পারেন, সেজন্য ওঁরা প্রতি সকালে ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন৷ সেখানে আদতেই কীভাবে দেশ, সংস্কৃতি আর ভাষার ব্যবধান পেরিয়ে সুরের সঙ্গে সুর মিশে যায়, সেই অভিজ্ঞতা হল৷ ওয়ার্কশপে তখন গান গাইছিলেন নদীয়ার লোকশিল্পীরা৷ সামনে বসে শুনতে শুনতে স্বতস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন হাঙ্গেরির শিল্পীরা৷ তাঁদের দেখাদেখি ডেনমার্ক থেকে আসা লোকসংগীত শিল্পীরা৷ নানা ধরণের বাদ্যযন্ত্র আর সাংগীতিক ঘরানা নিমেষে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল৷
এটাই ওঁরা চেয়েছিলেন, বললেন এই সুফি উৎসবের উদ্যোক্তা সংস্থা বাংলা নাটক ডট কম-এর কর্ণধার অমিতাভ ভট্টাচার্য৷
কথা হচ্ছিল হাঙ্গেরির লোকশিল্পীদের সঙ্গে৷ প্রায় ৩০০ বছর আগে তুরস্ক থেকে সার্বিয় এবং ক্রোয়েশিয়রা এই সাংগীতিক ধারাকে নিয়ে এসেছিলেন হাঙ্গেরিতে৷ জন্ম নিয়েছিল এক নতুন লোকসংগীতের৷ বললেন অ্যারন আরাদিচ৷
ইউরোপের সংগীত হলেও তার মধ্যে প্রাচ্যের প্রভাব স্পষ্ট৷ হাঙ্গেরির তালবাদ্য শিল্পী মাতিলা বুজাজ বোঝালেন, তার কারণ যে দুটি সাংগীতিক ধারা এর মধ্যে মিশে আছে, সেই ম্যাসিডোনিয় এবং বুলগেরিয় সংগীতে তুরস্কের গভীর প্রভাব আছে৷ কিন্তু হাঙ্গেরির এই গোত্রের সংগীত চরিত্রগতভাবে ইউরোপীয়৷
কলকাতার এই সুফি উৎসব শুরু থেকেই চেয়েছে, যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছতে৷ যে কারণে অনুষ্ঠান বা ওয়ার্কশপের কোনও প্রবেশমূল্য রাখেন না ওঁরা৷ কিন্তু ভাল কাজের পুরস্কার সবসময়ই পাওয়া যায়৷ আজ ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আইসিসিআর এবং ইউনেসকো এই উৎসবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ ক্রমশ আরও ব্যাপ্তি পাচ্ছে সুফি উৎসব৷ আরও ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজোড়া সাংস্কৃতিক ঐক্যের সুর৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক