‘সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিচারকদের ভূমিকাই মুখ্য হওয়া উচিত’
২৪ অক্টোবর ২০১৭ডয়চে ভেলে: সম্প্রতি ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো৷ এ নিয়ে বিতর্কও হলো৷ আপনি কী মনে করেন?
অর্পণা ঘোষ: আসলে যে বিষয় নিয়ে বিতর্ক হলো সেটা আমি সাপোর্ট করি৷ আমি যেটা জানি, বিচারকরা যাঁকে সিলেক্ট করেছিলেন তাঁকে দেয়া হয়নি৷ বিচারকরা যাঁকে সিলেক্ট করবেন তাঁকে দেয়াই ভালো৷ এখন বিচারকরা যদি গুরুত্ব না পায়, তাহলে এই ধরনের কোনো প্রোগ্রাম না করাই ভালো৷ পাশের দেশ দেখলেই বোঝা যায়, তারা কিভাবে একটা মেয়েকে তৈরি করে৷ আমি নিজেকে দিয়ে বুঝি এটার মাধ্যমে কতটা চেঞ্জ আসে৷ বিচারকদের এই ভূমিকা না থাকলে আজকে আমরা এই জায়গায় আসতে পারতাম না৷ এই বিতর্কটা না হলে আমাদের রং একটা ডিসিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে হতো৷
এটা কি ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নাকি আরো বিতর্কিত করবে?
অবশ্যই ভালো দিকে যাবে৷ আসলে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় একটি প্রতিষ্ঠান থাকে, এজেন্সি থাকে, কারো বিনিয়োগও থাকে৷ এখানে সবার গুরুত্ব আছে৷ এখানে মেয়েরাও গুরুত্বপূর্ণ, বিচারকরাও গুরুত্বপূর্ণ৷ পুরোটাই সার্কেল৷ এখন এই প্রতিযোগিতা থেকে যে মেয়েরা আসবে, তাদের নিয়ে বিতর্ক থাকবে না৷ যারাই এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, তারা সবাই এখন অনেক বেশি সতর্ক থাকবে৷
এই ধরনের প্রতিযোগিতায় বিচারকদের কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়?
আমি যদি আমার সময়ের কথা বলি, তাহলে তখন বিচারকরা যাঁকে সিলেক্ট করেছিলেন, তাঁকেই আনা হয়েছে৷ এখানে বিচারকদের ৯০ ভাগ মতামতই কাজে এসেছে৷ আমাদের যে চার মাস ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছে, তখন বিচারকরাই কিন্তু আমাদের সঙ্গে টাচে ছিলেন৷ অর্গানাইজারদের পছন্দ থাকতে পারে, কিন্তু বিচারকদের হাতে এগুলো ছেড়ে দেয়া উচিত৷ বিচারকরাই বুঝতে পারেন, আমাদের এই সেক্টরে কোন মেয়েটা আসলে এখানে টিকে থাকতে পারবে, তাকে কী করতে হবে৷ সে এই প্রফেশনকে বিলং করবে কিনা৷ আমার মনে হয়, বিচারকদের উপরই ছেড়ে দেয়া উচিত৷
আমাদের দেশে তো বিভিন্ন নামে বিউটি কনটেষ্ট হয়, এই প্রতিযোগিতার উপকারিতা কী?
আসলে আমাদের সময়ে আমি চট্টগ্রাম থাকতাম৷ আমার অভিনয় করার শখ বা আমি অভিনয় পারি, কিন্তু কিভাবে আমি এখানে আসবো তার কোনো পথ ছিল না৷ এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমি সেই পথ খুঁজে পেয়েছি৷ আমি জানি, আমি সুন্দরী, আমি জানি, আমি ভালো হাঁটতে পারি, তাহলে কেন আমি আমার প্রতিভাটা লুকিয়ে রাখবো? এটাও তো একটা মাধ্যম৷ এখন কিন্তু অনেকের পরিবারই মেয়েদের মডেলিং করতে দেয়, অভিনয় করতে দেয়৷ সে হিসেবে এটা একটা প্ল্যাটফর্ম৷ দেখেন বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় আমাদের পাশের দেশ থেকেই যাকে পাঠাচ্ছে, তাকে ৪/৫ বছর ধরে তৈরি করে পাঠাচ্ছে৷ অথচ আমাদের এখানে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই৷
এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কোন বিষয়কে?
প্রতিযোগিতাগুলো সুনির্দিষ্ট করে হয়৷ যেমন ধরেন, আমি যে প্রতিযোগিতা থেকে এসেছি, সেখানে বলাই হয়েছিল ‘নায়িকার খোঁজে'৷ ‘দারু চিনি দ্বীপ' একটা সিনেমা হবে, সেই সিনেমার নায়িকার জন্য ওইবারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল৷ আমি হয়েছিলাম ওই সিনেমার নায়িকা৷ একটা মেয়ের কনফিডেন্স লেবেল এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক বেড়ে যায়৷ আমাদের দেশে অভিনয়ে ভালো মেয়ের অভাব রয়েছে৷ এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যারা আসে, তারা ভালো করে৷ যারা ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে আসে, তাদের কিন্তু কোনো ট্রেনিং থাকে না৷ তারা কিভাবে ভালো করবে?
এই প্রতিযোগিতাকে আরো সুন্দর ও বিতর্কমুক্ত করতে হলে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
আমি অনেক জানি এটা বলব না৷ আমার পরামর্শ হলো, একটা টিনএজ মেয়ে এখানে আসে, সে তো সবকিছু জানে না৷ জানতে পারে না৷ ওই মেয়েগুলোকে যা শেখানো হয়, সেটা যেন পারফেক্টলি শেখানো হয়৷ দেখেন, আমাদের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' হলো, এখানে একটা মেয়েকে মুকুট দেয়া হলো আবার ফিরিয়ে নেয়া হলো৷ ওই মেয়েটার মধ্যে কী প্রভাব পড়ল সেটা দেখছে না কেউ৷ এটা যাতে না হয়৷ ওরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে৷ সেই স্বপ্নগুলো আমরা যেন পূরণ করতে পারি৷ অনেকে মনে করে, বিউটি কনটেষ্ট খারাপ জায়গা৷ আমি মনে করি, এটা খারাপ জায়গা না, এটা বরং বেশি করে হওয়া উচিত৷
এই যে সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয়, এটা কোনো -না- কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, এটা কি এমন হওয়া উচিত?
কিছু করারও তো নেই৷ দেখেন, আমাদের নাটক বলেন, সিনেমা বলেন, সবকিছুই একটা নড়বড়ে অবস্থায় আছে৷ সবকিছুই ওই প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর হাতেই আছে৷ আমি জানি না সরকার বা প্রধানমন্ত্রী এটা দেখেন কি-না৷ তিনি যদি একটু নজর দেন, তাহলে কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়৷ আমাদের অর্থনীতি বলেন, রাজনীতি বলেন, সবকিছুই একটা নড়বড়ে অবস্থায় আছে৷ এগুলো ঠিক হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়৷ আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এদিকে একটু নজর দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷
আপনি নিজেও তো এই ধরনের একটা প্রতিযোগিতা থেকে এসেছেন৷ সেখান থেকে কর্মজীবনে প্রবেশের অনুভূতি কী?
আমি মনে করি, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার আমার জন্য আর্শীবাদই ছিল৷ আমি চিটাগাংয়ের মেয়ে৷ অভিনয় করতে চাই, কিন্তু কিভাবে করব, কোথায় যাবো, কিছুই জানতাম না৷ এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমি প্ল্যাটফর্মটা পেয়েছি৷ এই জায়গাটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি৷ এই জায়গাকে ভালো বাসতে হবে৷ দেখেন, রাজনীতি বলেন, চাকরি বলেন, আপনি যেখানেই কাজ করবেন, সেই জায়গাটাকে ভালবাসতে হবে৷ তা না হলে কিছুই হবে না, সফলতা আসবে না৷ অনেক কষ্ট করেছি, একটু একটু করে জায়গা তৈরি করতে হয়েছে৷ আমি যেমন কষ্ট করেছি, এখন তেমন সফলতা পেয়েছি৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷