সুনীল ছেত্রীর মেসিকে ছোঁয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ
১৮ অক্টোবর ২০২১খুব একটা হইচই হয়নি। কিন্তু ভরতীয় ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রী এর মধ্যেই একটা কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোলের নিরিখে ফুটবল-সম্রাট পেলেকে তিনি আগেই পিছনে ফেলেছিলেন, এবার ছুঁলেন লিওনেল মেসিকে। মেসির মতোই সুনীল আন্তর্জতিক ফুটবলে ৮০টি গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করার ক্ষেত্রে এক নম্বরে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোন্যাল্ডো।
ভারতে খেলার ক্ষেত্রে প্রচারের সব আলো নিয়ে নেয় ক্রিকেট। অলিম্পিকের আসরে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জজয়ীদের নিয়ে দিন কয়েক হইচই হয়। তারপর আবার সবাই তাদের ভুলে যান। ফুটবলের অবস্থা তো শোচনীয়। ভারতীয় ক্রীড়াজগতে ফুটবল হলো দুয়োরানি। এখন কোনোক্রমে সাফ গেমস জেতাটাই ভারতীয় ফুটবলের বড় সাফল্য। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ বা আইএসএলে টিমগুলির সাফল্যের পিছনে বিদেশি প্লেয়ারদের অবদান থাকে সব চেয়ে বেশি। তা সত্ত্বেও সুনীল ছেত্রীর আন্তর্জাতিক ফুটবলে এতগুলো গোল দেয়ার কৃতিত্ব একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সামাজিক মাধ্যমে নিছক মজা করেই একটা মন্তব্য ঘুরছে। সুব্রত ভট্টাচার্য কলকাতার মাঠে পেলেকে আটকে দিয়েছিলেন। গোল করতে দেননি। আর সুব্রতের জামাই সুনীল ছেত্রী পেলের থেকেও বেশি আন্তর্জাতিক গোল করে ফেলেছেন।
গুরুত্ব কতটা
দীর্ঘদিনের ক্রীড়া সাংবাদিক ও আনন্দবাজার পত্রিকার সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও লেখক রূপক সাহা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মেসি, রোন্যাল্ডোর সঙ্গে সুনীল ছেত্রীর কোনো তুলনাই হয় না। সুনীল গোল করছেন সাফ গেমসে। আর মেসি, রোন্যাল্ডো বিশ্বকাপে। ফুটবলার হিসাবেও মেসি, রোন্যাল্ডোর সঙ্গে কোনো তুলনাই চলে না ছেত্রীর।''
রূপক সাহা মনে করেন, ''নিছক রেকর্ডের পিছনে ছোটা মানুষরা হইচই করছেন। আমরা ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এই জিনিস হামেশা দেখতে পাই। কোথায় চারটি বিশ্বকাপ খেলা এবং একাধিক বিশ্বকাপ জেতা প্লেয়ার, আর কোথায় সাফ গেমসে সাফল্য পাওয়া সুনীল ছেত্রী। এটা হলো ভারতীয় ফুটবলকে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা।''
তবে এবিষয়ে ভিন্নমত উত্তরবঙ্গ সংবাদের কার্যনির্বাহী সম্পাদক ও দীর্ঘদীনের ক্রীড়া সাংবাদিক রূপায়ণ ভট্টাচার্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে তো এতগুলো গোল কেউ করেনি। তাছাড়া, আজ যদি ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার কোনো কাগজ দেশের হয়ে সব চেয়ে বেশি গোল করার তালিকা তৈরি করে, তাহলে সেখানে সুনীল ছেত্রীর নাম রাখতেই হবে।''
রূপায়ণের বক্তব্য, ''একটা সময় সুনীল প্রায় হারিয়েই গেছিল। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান কেউ নেয়নি। কলকাতার চার-পাঁচ নম্বর টিম ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে খেলতে হয়েছে। সেখান থেকে সুনীল কামব্যাক করেছে। বেশি বয়সে কামব্যাক। সেখান থেকে এই জায়গয় পৌঁছানো বড় ব্যাপার। বাইচুং, বিজয়নকেও ছাপিয়ে গেছে। তবে অতীত দিনের প্লেয়াররা এত বেশি খেলার সুযোগ পাননি। সুনীল পেয়েছেন এবং সেটাকে কাজে লাগিয়েছেন।''
সুনীল যা বলেছেন
সুনীল ছেত্রী মনে করেন, রোন্যাল্ডো ও মেসির মতো দুই মহাতারকার সঙ্গে তার কোনো তুলনাই চলে না। এই তুলনা অর্থহীন। তিনি দেশের হয়ে গোল করতে ভালোবাসেন। আরো গোল করতে চান। আর পেলেকে নিয়ে তার মন্তব্য, ''ফুটবল সম্রাটকে গোলসংখ্যার নিরিখে পিছনে ফেলে দেওয়া নিয়ে আলাদা কোনো অনুভূতি নেই। আমি শুধু খুশি, গোল করতে পেরেছি বলে।''
সুনীল ছেত্রী জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন উন্নতি করার চেষ্টা করেন। তবে তিনি মনে করেন, ভারতকে সাফল্য পেতে হলে, তার থেকে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার তুলে আনতে হবে। তা না হলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে না।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে,উপেক্ষিত ভারতীয় ফুটবলে কম শক্তিধর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করলেও সুনীলের এই রেকর্ড ছোঁয়ার ঘটনাকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। সুনীল তার এই গোলগুলি না করলে অনেক দেশের বিরুদ্ধেই সম্ভবত জিততে পারত না ভারত।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)