‘সুখরঞ্জনকে ফিরিয়ে আনতে হবে’
১৭ মে ২০১৩সাঈদীর আইনজীবী প্যানেলের প্রধান ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন বালিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর হাতে তুলে দেয়৷ বিএসএফ তাকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দমদমের একটি কারাগারে তোলে৷ পরে ভারতীয় আদালত তাকে ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়৷’’
সুখরঞ্জন নিজেও এসব কথা স্বীকার করেছেন – এ কথা উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে এ সকল তথ্য এসেছে৷ এখন আমাদের দাবি, তাকে নিরাপদে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনা হোক৷’’
তবে সাঈদীর আইনজীবী প্যানেলের এই দাবি অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন ছিলেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী৷ অথচ রাষ্ট্রপক্ষে যখন সাক্ষ্য চলছিল তখনই তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ এ কারণে তার পরিবার তখন থানায় সাধারণ ডায়েরিও করে৷ এরপর তাকে বাদ দিয়েই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য শেষ করা হয়৷ আসামিপক্ষেও ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন৷ তখনও তারা (আসামিপক্ষ) বলেননি যে সুখরঞ্জন তাদের পক্ষে সাক্ষী দেবেন৷ উভয় পক্ষের সাক্ষী যখন শেষ, তখন একদিন হুট করেই সাঈদীর আইনজীবীরা বললেন যে, সুখরঞ্জন তাদের পক্ষে সাক্ষী দিতে ট্রাইব্যুনালে আসার সময় গেট থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে৷ আসলে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা এই দাবি তুলেছেন৷‘‘
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘সুখরঞ্জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ধরে নিতে যাবে? সুখরঞ্জন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিলেই যে সবকিছু তার পক্ষে চলে যাবে, এমন তো নয়৷’’ তিনি দাবি করেন, আসলে সাঈদীর পক্ষের লোকজনই সুখরঞ্জনকে সরিয়ে ফেলেছে এবং রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী দিতে দেয়নি৷
সরকারি প্রসিকিউটরের এমন বক্তব্যকে মানতে রাজি নন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক৷ তিনি বলেন, ‘‘সুখরঞ্জন ছিলেন সাঈদীর পক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী৷ যে কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে৷ সরকারি আইনজীবীরা এ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন৷ তাই সুখরঞ্জনকে দেশে ফিরিয়ে আনলেই সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে৷’’
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের রিপোর্টে এসব ব্যাপার অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷
গত বছরের ৫ নভেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহৃত হন সুখরঞ্জন – শুরু থেকেই এমন দাবি করে আসছেন সাঈদীর আইনজীবীরা৷ এদিকে, সুখরঞ্জনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)৷ এইচআরডাব্লিউ-এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস এক বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালে এভাবে সাক্ষী অপহরণের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ, বিচারক ও সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে৷
আসামিপক্ষের এমন অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষ পরে আদালতকে জানায় যে, আসামিপক্ষের এই অভিযোগ সত্যি নয়৷ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেইনি এবং এ বিষয়ে আদালত আর কোনো আদেশও দেয়নি৷