শূন্য তারকাবিশিষ্ট হোটেল!
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭সুইজারল্যান্ডের গনটেন গ্রামের কাছে গ্যোবসি পাহাড়ের চূড়ায় এটি অবস্থিত৷ ১,২০০ মিটার উঁচুতে হোটেলটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন যমজ দুই ভাই ফ্রাংক ও পাট্রিক রিকলিন৷ ফ্রাংক রিকলিন বলেন, ‘‘শূন্য তারকা হোটেলের অন্যতম আকর্ষণ হলো, অনেক অতিথি বুঝতে পারেন না যে, এটি আসলে কী৷ এটি কি একটি শিল্পকর্ম, নাকি পর্যটন বা উদ্ভাবন? অতিথিদের একটুখানি অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়ার বিষয়টি বেশ দারুণ৷’’
কোনো ওয়ালপেপার নেই, বরং আশেপাশের দারুণ দৃশ্যের টানে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ সেখানে যান৷ পাট্রিক রিকলিন বলেন, ‘‘আমরা এই বিছানার নকশা করেছি, তৈরিও করেছি এবং শুরু থেকে সবসময় এই হোটেলে অতিথি থাকছেন৷’’ ফ্রাংক রিকলিনের মতে, এটি আসলে বিলাসিতা উপভোগের অন্য ধরনের এক উপায়৷
রিসেপশনিস্ট কাম বাটলার হলেন ক্যোবি ডিটরিশ৷ কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি এই কাজ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি যে আমার জন্য এমন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে৷ আমি এই হোটেলের অংশ হতে পেরে আনন্দিত৷’’ সারাদিন গরু চরানোর পর সন্ধ্যায় তিনি কাজের জন্য তৈরি হন৷
ক্যোবি ডিটরিশ সম্পর্কে পাট্রিক রিকলিন বলেন, ‘‘ভাবনা ছিল, কীভাবে এই আর্টকে জীবন্ত করে তোলা যায়, যেন যাঁরা এর চারপাশে আছেন, এখানে থাকছেন, তাঁরাও এর অংশ হয়ে যান৷ ক্যোবিকে ছাড়া এই শিল্পকর্ম একেবারে গতানুগতিক হয়ে যেত৷ তিনি আস্তে আস্তে এই আর্টের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন৷ একজন শিল্পী হিসেবে মূল্যায়ন করলে এটি আমার কাছে একটি পেন্টিংয়ের মতো মনে হয়, তবে জীবন্ত৷’’
গ্রীষ্মে এই হোটেলের পাশের এলাকায় একসময় স্ত্রী, সন্তান ও গরুদের নিয়ে একাকী জীবন যাপন করেছেন ক্যোবি৷ তবে এখন হঠাৎ করে প্রতিদিন নতুন অতিথিদের বরণ করতে ভালই লাগছে তাঁর৷
ক্যোবি ডিটরিশ তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘দুই দম্পতি এখানে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে৷ একজন এসেছিলেন হেলিকপ্টারে করে৷ আমি সেই সময় উপস্থিত ছিলাম এবং বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করেছি৷ দারুণ ব্যাপার ছিল ওটা৷ প্রস্তাবে তিনি হ্যাঁ বলেছিলেন৷ এখানে আমি এখন যা দেখছি, তা আগে কখনও দেখিনি৷’’
এই হোটেলের একমাত্র তারকা হলেন অতিথিরা৷ এটিই শূন্য তারকা হোটেলের দর্শন৷ ফ্রাংক রিকলিন বলেন, ‘‘যখন আমরা অতিথিদের প্রতিক্রিয়া দেখি, এই আর্ট প্রকল্পে তাদের চলাফেরা ও উৎসাহ দেখি, তখন আমরাও অনুপ্রাণিত হই৷ আমরা বুঝতে পারি, আমাদের কনসেপ্টটা সফল হয়েছে৷’’
হোটেলের এক অতিথি আন্দ্রেয়া তাসির্তো বলেন, ‘‘প্রথমে স্বপ্ন মনে হয়েছিল৷ তারপর সকালে উঠে মনে হলো, না, ওটা স্বপ্ন ছিল না৷’’ আরেক অতিথি রাফায়েল টামান বলেন, ‘‘দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ আমি আসলে খুবই ভাল ঘুমিয়েছি৷ বিছানাটা বেশ আরামদায়ক ছিল৷ একটু মশা ছিল, তবে সমস্যা হয়নি, অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল৷’’
অনেক কোম্পানি এই দুই শিল্পীকে তাদের কনসেপ্ট নিয়ে ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল৷ এর মধ্যে একটির মূল্য ছিল কয়েক মিলিয়ন ইউরো৷ কিন্তু তাঁরা রাজি হননি৷ কারণ হোটেলের ভবিষ্যতের বিষয়টি তাঁরা খোলা রাখতে চান৷
রেগিনা নিডেনজু/জেডএইচ