‘সিরিয়ায় চূড়ান্ত খেলা শুরু হয়েছে'
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬সিরিয়া সংঘাত যেন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে চলেছে৷ বাশার আল-আসাদ আবার জিততে চলেছেন – রাশিয়ার সাহায্যে, যার মূল অংশ ব্যাপক বিমান হানা হলেও, সরকারি সেনাবাহিনী সম্ভবত স্থলযুদ্ধেও সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সাহায্য পাচ্ছে৷
আলেপ্পোকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ যেন সংঘাতের মোড় ফেরাতে চলেছে৷ আসাদের সৈন্যরা যদি শহরটাকে পুরোপুরি তাদের দখলে আনে, তাহলে সিরিয়ার একনায়ক শুধু রণক্ষেত্রেই জয়ী হবেন না, তিনি আবার সিরিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্লেয়ার' হয়ে উঠবেন৷ সিরিয়ার নাগরিকদের পালানো, আপোশ বা মৃত্যুবরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না৷
সিরিয়া তো আজ আর একটা কৃত্রিম ভৌগোলিক সত্তা ছাড়া আর কিছু নয়৷ দেশটা ভিন্ন ভিন্ন এলাকা, গ্রাম ও শহরের একটা সমষ্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কোথাও সিরিয়া সরকারের প্রতিপত্তি, তো অন্য কোথাও বিরোধী গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে – তার সঙ্গে আল-নুসরা ফ্রন্ট বা তথাকথিত ‘‘ইসলামিক স্টেট'' বা আইএস-এর মতো খুনে গোষ্ঠীগুলিও আছে৷ এই গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার জনগণ, সিরিয়ায় নাগরিকরা শুধু শিকার, তাদের জীবনের কোনো দাম নেই৷
আসাদের পাশে রাশিয়া
আসাদ যে আবার মাঠে নামতে পারলেন, সেটা রুশিদের কল্যাণে৷ রুশিরা ক্ষমতার যে ‘ভ্যাকুয়াম' সৃষ্টি হয়েছে, তার সুযোগ নিয়েছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন কোনোরকম দ্বিধা করেননি৷ তাঁর লক্ষ্য ছিল, আসাদকে ক্ষমতায় রাখা৷ বর্তমানে ক্রেমলিন সেই লক্ষ্য সাধনের জন্য সব কিছু করছে৷ দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো এলাকাটিতে স্থায়িত্ব আনা, তার জন্য যদি একনায়কতন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে, তা-তেও ক্ষতি নেই৷ আরব বসন্ত বা আরব গণতন্ত্র নিয়ে আজ আর কেউ উচ্চবাচ্য করছে না৷ সে সব অলীক স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া হয়েছে৷ তবে একটি পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত সিরিয়া স্থিতিশীলতার উপাদান হতে পারে কিনা, সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা বা প্রবৃত্তি আজ কারো নেই৷
গোটা পশ্চিমি বিশ্ব এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – অর্থাৎ বারাক ওবামা আজ নিরুপায় দর্শকের ভূমিকায়৷ পশ্চিমা বিশ্ব জানে যে, সামরিক হস্তক্ষেপ করে কোনো লাভ হবে না, বরং তা আরো বড় আকারের ও বহুপাক্ষিক সংঘাতের অবতারণা ঘটাতে পারে৷ আর পশ্চিমি সৈন্যরা কাদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করবে, সেটাও একটা প্রশ্ন বটে৷
পশ্চিমি বিশ্ব ধাঁধায়
কাজেই পশ্চিমা রাজনীতিকরা তাদের যাবতীয় আশা নিবদ্ধ করেছেন জেনেভা আেলাপ-আলোচনার ওপর – যদিও তা ২৮শে ফেব্রুয়ারির আগে শুরু হবে না৷ জেনেভার গোলটেবিলে কোনো একটা সমাধানের আশা করছে পশ্চিমি দুনিয়া৷ ওদিকে সিরিয়ায় এক নতুন বাস্তব সৃষ্টি হচ্ছে৷ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো: আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তি অর্জন যদি সম্ভবও হয়, তার পর সিরিয়ায় রাজত্ব করবে কে অথবা কারা? এমন একটি বিরোধীপক্ষ যাদের কোনো সমর্থন নেই? রাশিয়ার প্রসাদপুষ্ট আসাদ? নাকি ইসলামপন্থি জঙ্গিরা? সিরিয়া কি ২০১১ সালের আগে দেশটা যেমন ছিল, কোনোদিন আবার সেই অবস্থায় ফিরতে পারবে?
পশ্চিমের অসহায়তাই সিরিয়ায় এই ‘ক্ষমতাশূন্যতা' সৃষ্টি করেছে – বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও সেই সঙ্গে পুটিন ও আসাদ যার সুযোগ নিয়ে নিজেদের জায়গা করে নিতে পেরেছেন
কাজেই যা পড়ে থাকছে তা হল দুই আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে একটি ‘প্রক্সি' যুদ্ধ৷ রিয়াধ দেখেছে হাওয়া কোনদিকে বইছে৷ দ্বিধা বা উদ্বেগ থেকে আর কারো কোনো লাভ হবে না৷ এখন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে শুধুমাত্র কয়েকটি শর্তে সাহায্য করবে – মূলত নৃপতিতন্ত্রটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য৷ কাজেই সৌদি আরব এখন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে স্থলসৈন্য পাঠাতেও রাজি – যা কিনা সৌদি নীতিতে একটা বিপ্লবের সমতুল৷ কিন্তু এই পরোক্ষ ক্ষমতার লড়াইয়ে মুখ্য বিজয়ী হলো ইরান – কেননা সিরিয়ার যুদ্ধ ও তার ফলশ্রুতি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠবে ইরান৷ যে কারণে ইসরায়েল চিন্তিত৷ সিরিয়ায় চূড়ান্ত খেলা শুরু হয়েছে৷