সিরিয়া
৭ আগস্ট ২০১২সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলেছে৷ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন৷ অন্যরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ সিরিয়ার খ্রিষ্টানরাও এর ব্যতিক্রম নয়৷ দেশের জনসংখ্যার দশ শতাংশ খ্রিষ্টান৷ এবং তাদের আশংকা, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সফল হলে, তাদেরও তার মাশুল গুণতে হবে৷
সিরিয়ার কুজাইর শহর থেকে পলাতক সিরীয় উদ্বাস্তুরা জার্মান ‘‘ডের স্পিগেল'' সাপ্তাহিকের এক সংবাদদাতাকে সম্প্রতি বলেছেন যে, উগ্র ইসলামপন্থিরা তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যকে হত্যা করেছে৷ নিহতেরা বস্তুত আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন৷ কিন্তু সিরিয়ায় খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে রীতিমতো প্রচারণা চলেছে৷ তারা সরকারের চর বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে৷ শুক্রবারের নমাজের সময় মসজিদ প্রাঙ্গনেই বলা হয় যে, তাদের বিতাড়ন করাটা একটা পবিত্র কর্তব্য৷
গোড়ায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের সম্পর্ক ভালোই ছিল, কিন্তু বাইরে থেকে আসা ইসলামপন্থিরা বিদ্রোহীদের খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেছে৷ এক খ্রিষ্টান যাজক ডয়চে ভেলের আরবি বিভাগকে বলেছেন: ‘‘খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ করা হয়, তারা সরকারকে সাহায্য করছে৷ কিছু কিছু এলাকায় তাদের অনেক আগেই পালাতে বাধ্য করা হয়েছে৷ তাদের বলা হয়েছে, হয় তোমরা আমাদের দিকে, নয়তো তোমরা আমাদের বিপক্ষে৷''
ভয়-ভীতি-আতঙ্ক
আসাদ প্রশাসনের আমলে খ্রিষ্টানরা সিরিয়ায় যে মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, তা অন্যান্য আরব দেশের তুলনায় অনেক বেশি -- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খ্রিষ্টান যাজকটি সে'কথা অস্বীকার করেন না৷ ‘‘অপরদিকে অনেকেরই ভয় যে, ইসলামপন্থিরা ক্ষমতায় এলে খ্রিষ্টানদের শুধু একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলে গণ্য করা হবে, যাদের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সব অধিকার থাকবে না,'' বললেন তিনি৷ এছাড়া ইরাকের মতো খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের আশঙ্কা আছে৷
সিরীয় সমাজতত্ত্ববিদ ইশাক কানাউ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইসলামপন্থিরা ক্ষমতায় এলে খ্রিষ্টানরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হবে, বলে খ্রিষ্টানদের আশংকা৷ মিশর এবং বিশেষ করে ইরাকে ঠিক এই ধরণেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে খ্রিষ্টানদের৷ তবুও সিরিয়ায় খ্রিষ্টানদের অধিকাংশ ইত্যবসরে বিদ্রোহীদের দিকে, বলে কানাউ'এর ধারণা৷ তবে তাদের অতি সাবধান থাকতে হয়, যাতে তারা কোনো তরফ থেকেই আক্রমণের সম্মুখীন না হয়৷ খ্রিষ্টানরা সরকারপক্ষের নৃশংসতায় আতংকিত, তবে তাদের উগ্রপন্থি এবং চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির ভীতিও কিছু কম নয়, বলেন কানাউ৷
গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ সুরক্ষা
‘‘গণতন্ত্রের জন্য সিরীয় খ্রিষ্টান'' নামধারী সংগঠনের মুখপাত্র জর্জ স্টেভো ডয়চে ভেলে বলেন, মাত্র স্বল্প কিছু সিরীয় খ্রিষ্টান আজ সরকারের সমর্থক৷ অধিকাংশ সিরীয় খ্রিষ্টান আজ জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু নীরব ভাগের অংশ৷ এমনকি সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধিদের অনুপাত ১০ শতাংশ৷ আলেপ্পোর ‘‘বিপ্লবি পরিষদ''-এর মুখপাত্র মোহাম্মেদ লুলে ডয়চে ভেলেকে বলেন, বহু খ্রিষ্টানকে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে৷ সম্প্রতি দামেস্কে সরকারের স্নাইপাররা পুনরায় একজন খ্রিষ্টান আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে, বলে লুলে দাবি করেন৷
অপরদিকে এ'ও শোনা গেছে যে, আসাদ প্রশাসনই খ্রিষ্টানদের মধ্যে ইসলামপন্থিদের ভীতিকে প্ররোচনা দিচ্ছে৷ জর্জ স্টেভো'র মতে সিরিয়ার খ্রিষ্টানদের বুঝতে হবে যে, কোনো সরকার কিংবা কোনো বিশেষ ব্যক্তি তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না৷ শুধুমাত্র গণতন্ত্র ও নাগরিক সমাজ তাদের সুরক্ষা দিতে পারে৷ তবে সিরিয়া গণতন্ত্র ও নাগরিক সমাজের দিকে অগ্রসর হবে কিনা, সে গ্যারান্টি আজ সিরিয়ার খ্রিষ্টানদের দেওয়া সম্ভব নয়৷
প্রতিবেদন: ইউসেফ বুফিদজেলিনে / এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ