বার্লিনে পুটিন
১ জুন ২০১২সিরিয়ায় সহিংসতা দমনে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক বড় বাধা রাশিয়া৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই সদস্য সিরিয়ার উপরে কড়া বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে নয়৷ ফলে নিরাপত্তা পরিষদে এসংক্রান্ত প্রস্তাবের বিপক্ষেই অবস্থান সেদেশের৷ এই নিয়ে যখন পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা, তখনই জার্মানি, ফ্রান্স সফর করছেন পুটিন৷ তৃতীয়বার ক্রেমলিনে ফেরার পর এটাই তাঁর প্রথম বার্লিন সফর৷
বার্লিনে দুই নেতার বৈঠকে ‘সিরিয়া' বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে, এমনটা বোঝা গিয়েছিল আগেই৷ বৈঠক শেষে সেদিকেই ইঙ্গিত দিলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্কেল জানান, তিনি এবং পুটিন দু'জনই রাজনৈতিক পথে সিরিয়া সংকটের সমাধান চান৷ ম্যার্কেল বলেন, হুলায় সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড আরো একবার সিরিয়ায় ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয় এবং সেদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দু'জনই একটি বিষয় পরিষ্কার করেছি যে, আমরা রাজনৈতিক সমাধান চাই এবং আনান'এর পরিকল্পনাকে এক্ষেত্রে ‘স্টার্টিং পয়েন্ট' হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ কিন্তু আমাদের সর্বশক্তি এবং ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে – আনানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করতে হবে''৷
বৈঠক শেষে পুটিন বলেন, ‘‘সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করছে এরকম কোন পক্ষকেই সমর্থন করছি না আমরা''৷ সিরিয়ার উপর কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগেও রাজি নয় পুটিন৷
এর আগে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বলেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, রাশিয়ার বোঝা উচিত আমরা যখন সিরিয়ায় সহিংসতা বন্ধে করতে চাইছি, তখন আসলে রাশিয়ার কৌশলগত সুবিধার বিরোধিতা করছি না৷'' তিনি বলেন, সিরিয়া সংকটে রাশিয়া এবং আসাদ শাসক গোষ্ঠীর প্রতি সেদেশের মনোভাব বড় ভূমিকা পালন করছে৷ তবে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সতর্ক মনোভাব প্রকাশ করেছেন ভেস্টারভেলে৷ তাঁর মতে, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পথ কঠিন হলেও সংকট নিরসনে আমাদেরকে সে পথেই আগাতে হবে৷
ম্যার্কেল যখন বার্লিনে পুটিনকে স্বাগত জানান, তখন তাঁর কার্যালয়ের বাইরে কিছু মানুষ ছিল প্রতিবাদ মুখর৷ সেখানে একজনের হাতে রাশিয়ার পতাকার আদলে একটি ব্যানার শোভা পাচ্ছিল যাতে রাশিয়ান ভাষায় লেখা রয়েছে ‘পুটিন একজন চোর'৷ শুক্রবার দুপুরে বেলারুস থেকে বার্লিনে পৌঁছান পুটিন৷ এখান থেকে আবার প্যারিসে গন্তব্য তাঁর৷
উল্লেখ্য, সিরিয়ার হুলা হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ সিরিয়ার রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করেছে৷ কিন্তু রাশিয়া এবং চীন এখনো সিরিয়ার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে৷ রবিবার অবশ্য হুলা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে সম্মত হয় দেশ দুটি৷ কিন্তু আপাতত সিরিয়ার বিরুদ্ধে এটুকু পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করছে রাশিয়া৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন