‘সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়'
৯ এপ্রিল ২০২২সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই৷ আদালতের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে মামলা হস্তান্তরিত হয়েছে৷ রামপুরহাটের ঘটনা, ঝালদার কাউন্সিলর খুন থেকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত হাতে নিয়েছে সিবিআই৷ এর আগেও রাজ্যের একাধিক মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই৷
সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি এমএম নারাভানে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয়ের কথা বলেছেন৷ অতীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নির্ভরযোগ্যতার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশে সিবিআই যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির তদন্ত করেছে, তার ইতিহাস কী বলছে?
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘১৯৯৩-এর ভিখারি পাসোয়ান, ২০০১-এর গড়বেতা হত্যা, ২০০৭ সালের রিজওয়ানুর রহমানের রহস্যমৃত্যু থেকে নোবেল চুরি, সিবিআই তদন্তে সুরাহা হয়নি৷ দেশজুড়ে এমন অসংখ্য মামলা রয়েছে৷ সাধারণ মানুষেরও অভিজ্ঞতা, বহু কোটি টাকার সারদা ও নারদ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে বহু সময় পার হয়ে গিয়েছে৷ এখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ভোট পরবর্তী হিংসা, কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলাও রয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা তৎপর হয়৷ বাকি সময় তদন্তের কাজ চলে ঢিমেতালে৷ সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়৷''
রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ শাসক দলের কথায় চলে৷ যারা অপরাধের শিকার হচ্ছেন, তারা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছেন৷ এরা মনে করছেন, সিবিআই তদন্তভার নিলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে নেই৷ তাই ঘনঘন সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছে৷
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পুলিশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে৷ তাই মানুষ যখন পুলিশকে সন্দেহ করে, তখন সিবিআই চায়৷ কিন্তু সিবিআই যে নিরপেক্ষ সেটাও নয়৷''
সিবিআইকে অতীতে সুপ্রিম কোর্ট ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখি' আখ্যা দিয়েছিল৷ পরবর্তীতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট একই সুরে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের অপপ্রয়োগ শুরু হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে৷ তারপর জনতা পার্টি ক্ষমতায় এসে কমিশন গড়েছিল৷ যদিও শেষমেশ কিছু বদলায়নি৷ সংসদের তিন তিনটি স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট আছে৷ কিন্তু সবই রয়ে গিয়েছে ঠান্ডা ঘরে৷
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিল, সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ কিন্তু এটি আইনের দ্বারা তৈরি সংস্থা৷ নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তাদেরই প্রমাণ করতে হবে৷''
বিজেপি যখন ক্ষমতায়, সেই সময় কেন্দ্রীয় সংস্থা পি চিদম্বরমের মতো শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাকেও জেলে পাঠিয়েছে৷ দেশের সবচেয়ে বড় দুই জাতীয় দল একে অপরের দিকে আঙুল তুললেও নিজেরা ক্ষমতায় থাকার সময় সিবিআইকে ব্যবহার করেছে বলে বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ৷ অর্থাৎ একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা!
তদন্তে অসফল হওয়ার জন্য সব সময় সিবিআইকে দায়ী করতে রাজি নন নজরুল ইসলাম৷ তিনি মনে করেন, রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করার অনেকদিন পর কেন্দ্রীয় সংস্থা দায়িত্ব পাচ্ছে৷ তাদের আধিকারিকরা জাদু জানেন না৷ রাজ্য পুলিশ এর মধ্যে অনেক তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিচ্ছে৷ এরপর তদন্তভার হাতে নিয়ে রহস্যের সমাধান কঠিন কাজ৷
বিকাশরঞ্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তদন্ত যে-ই করুক, তাকে আইনের কাছে সৎ থাকতে হবে৷ রাজনৈতিক নেতা বা ব্যক্তির কাছে নয়৷ এই সর্বত্র একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷''
শুভাশিসের মতে, আস্থার অভাব ঘটলেও কোনো রাজনৈতিক দল চলতি পরিস্থিতি বদলাতে চায় না৷ একেবারে নীচুতলা থেকে আওয়াজ না উঠলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না৷
বিকাশরঞ্জন মনে করেন, রাজ্য পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে মানুষ বিচার না পেলে বিদ্রোহ করবে৷ লাঠি হাতে রাস্তায় নামবে৷ তখন কেউ রেহাই পাবে না৷