সিটি নির্বাচনে সেভাবে মাঠে নেই বিএনপি
১৭ এপ্রিল ২০১৫ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মাঠে আছেন৷ তাঁর বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টু আত্মগোপনে থেকেও মনেনায়ন দাখিল করেছিলেন৷ কিন্তু তা বাতিল হওয়ায় তাঁর ছেলে এখন প্রার্থী৷ কিন্তু ছেলের নির্বাচনী প্রচাণায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু মাঠে নেই৷ একাধিক মামলায় তিনি এখনো জামিন পাননি৷ তাই ছেলেকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন নাসরিন আউয়াল৷
ঢাকা সিটি দক্ষিনে বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে সর্বশেষ বুধবার হাইকোর্টে দেখা গেছে৷ তিনি আশা করেছিলেন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে পারবেন এবং তা পারলে নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন৷ কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর আগাম জামিনের ব্যাপারে বিভক্ত রায় দেয়ায় সেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না৷ আবারো আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি৷ তাঁর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে নিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাস৷
এদিকে ঢাকায় ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় সবার নামেই মামলা আছে৷ মামলা মাথায় নিয়ে তাঁদের কেউ কেউ ঝটিকা মিছিলের মতো ঝটিকা প্রচারণা চালাতে গিয়েও ধরা পড়ে যাচ্ছেন৷
বৃহস্পতিবার মিরপুরের পাইকপাড়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী কাওছার আহমেদ প্রচার কাজে নেমে পুলিশের হাতে আটক হন৷ তিনি মিরপুর থানা বিএনপির সহসভাপতি৷ আটকের কারণ জানাতে গিয়ে মিরপুর থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি নাশকতার মামলা আছে৷ প্রত্যেকটি মামলায়ই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷'
ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকার বিএনপির একজন কাউন্সিলর প্রার্থী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ভেবেছিলাম শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঝটিকা প্রচারে নামব৷ তবে মিরপুরের কাওছারের ঘটনা শুনে আর বের হইনি৷ আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব প্রচার চালাচ্ছি৷ কর্মীরাও প্রকাশ্যে মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে৷''
বিএনপির মগবাজার এলাকায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর কয়েকজন কর্মী ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা কয়েকদির প্রচার চালানোর পর থানায় আমাদের নামের তালিকা পাঠান আওয়ামী লীগের প্রার্থী৷ এরপর থেকে আমরা আর মাঠে প্রচারের কাজে নামিনা৷ এমন কী নিজেদের বাসায়ও থাকিনা৷''
মঙ্গলবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির প্রার্থীদের হযরানীর অভিযোগ করেন৷ তিনি সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করারও দাবী জানান৷
আর শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারের সময় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস অভিযোগের সুরেই বলেন, ‘‘প্রচারনার সময় কর্মীদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি তাদের ওপর হামলাও করা হচ্ছে৷'' তিনি দাবী করেন, ‘‘মিথ্যা মামলা দিয়ে মীর্জা আব্বাসকে সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না৷ মীর্জা আব্বাস জামিন পাবেন বলে আশা করেছিলাম৷ কিন্তু বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে৷''
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ এরইমধ্যে পুলিশ বাহিনীর প্রতি প্রার্থীদের কোনো ধরণের হয়রানি না করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান৷
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা কমিশন নিরপেক্ষ আছি৷ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ৷ আমরা তা-ই করছি৷ তবে পুলিশের দায়িত্ব পুলিশ পালন করলে আমরা তাদের বাধা দিতে পারিনা৷'' তিনি বলেন, ‘‘কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে যদি মামলা থাকে আর যদি তাঁরা জামিন নিয়ে না থাকেন তাহলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলে আমাদের কিছু বলার নেই৷ আইনে যা আছে পুলিশ তা-ই করছে৷'' তবে অযথা হয়রানির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন তা দেখবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘পুলিশ কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর কর্মীদের হয়রানি করছে এই অভিযোগ ঠিক নয়৷ যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, যারা আদালত থেকে জামিন নেননি, তাদের গ্রেপ্তার করা কোনোভাবেই হয়রানি হতে পারে না৷ এটা পুলিশের আইনি দায়িত্ব৷''
অন্যদিকে মামলার ঝামেলা না থাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির প্রার্থী মনজুর আলম প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন৷ কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাঁরা প্রকাশ্যে প্রচারে নামছেন না৷