সিআইডির বিরুদ্ধে তদন্তে সিবিআই
২৬ অক্টোবর ২০২৩পানশালা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা তোলা চেয়ে হুমকি। গত বছর মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী জিতেন্দ্র নভলানির কাছ থেকে তোলা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে দুই সিআইডি অফিসার রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ ওঠে বালিগঞ্জ থানার ওসি সুদীপ দাশগুপ্ত ও আর একজনের বিরুদ্ধে। এই মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই। সিআইডি হলো রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থা এবং সিবিআই হলো কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো।
অভিযুক্ত সিআইডি
এর আগে নভলানি সিআইডি এবং পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের ওরলি থানায় অভিযোগ জানান। অভিযোগ, তারা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা তোলা আদায় করেছিলেন। এই মামলাটি নিজেদের হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই সূত্রে এফআইআর করেছে তারা।
কলকাতা পুলিশ নভলানির সংস্থা বোনানজা ফ্যাশন মার্চেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি মামলায় তদন্ত করছে। সেই সূত্রে গত বছর ব্যবসায়ীর স্ত্রী ভূমিকাকে দুবাই থেকে ফেরার পর মুম্বই বিমানবন্দরে আটকানো হয়। কলকাতা পুলিশের জারি করা লুক আউট নোটিসের ভিত্তিতে। কলকাতা থেকে সিআইডি অফিসার রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় মুম্বই গিয়ে তাকে হেফাজতে নেন।
নভলানির দাবি, রাজর্ষির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। এরপরেই ১০ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন। কলকাতার অন্য একজন সিনিয়র অফিসারও টাকা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআই এফআইআর অনুযায়ী, নভলানি টাকা দিতে সম্মত হওয়ার পর তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুভেন্দু বনাম তৃণমূল
কয়েক মাস আগে তদন্ত মুম্বই পুলিশের থেকে সিবিআইয়ের হাতে আসে। বুধবার শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে বলেন, নভলানি তার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেলের নামও বলেছিলেন। শুভেন্দু লিখেছেন, "কেউ যত উঁচুতে থাকুন না কেন আইন সবার ঊর্ধ্বে।"
এই যুক্তিতেই শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তার বক্তব্য, "বিরোধী দলনেতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ঠিকই বলেছেন, আইন সবার উপরে। তিনি এখন সিবিআই বা আদালতের রক্ষাকবচ নিয়ে চলতে পারলেও চিরকাল পারবেন না। আইনের হাতে ধরা পড়তেই হবে।"
রামপুরহাট গণহত্যার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখ সিবিআই হেফাজতে মারা যায়। সেই ঘটনা মনে করিয়ে শান্তনু সেন বলেন, "লালনের স্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, সিবিআই অফিসাররা তার কাছে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন। এরও বিচার হওয়া উচিত।"
সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য তৃণমূল ও বিজেপি উভয়কেই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, "দুটি সংস্থায় দক্ষ অফিসাররা রয়েছেন। কিন্তু তাদের কর্তৃপক্ষের কথায় চলতে হয়। এর ফলে সিবিআই ও সিআইডি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে পারে না। এক্ষেত্রে কী হয় সেটাই দেখার।"
অভিযোগ খারিজ সিআইডির
সিআইডি যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। এডিজি সিআইডি আর রাজশেখরন বলেছেন, "ডিজি ও এডিজির মতো সিনিয়র আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হয়েছে। শিখিয়ে পরিয়ে ও বানিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।"
রাজ্য পুলিশের সাবেক কর্তা, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস নজরুল ইসলাম বলেন, "অফিসার দুর্নীতিগ্রস্ত হলে টাকা নিতেই পারেন, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে অভিযোগ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে। যদি তদন্তকারী সংস্থা প্রমাণ জোগাড় করতে পারে, তা হলে অভিযোগের সারবত্তা পাওয়া যাবে।"
নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা বা গরু পাচার থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা, এই রাজ্যের একগুচ্ছ মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত চালাচ্ছে। এবার খোদ রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধেই তদন্ত করছে তারা।
এক্ষেত্রে সিবিআই ও সিআইডি যুযুধান শিবির হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নজরুল বলেন, "আমাদের দুর্ভাগ্য এটাই। এই সংস্থাগুলিকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয়া হয় না। সিবিআই অফিসারদের একাংশ কেন্দ্রের কথায় চলে। সিআইডি অফিসারদের একটা অংশ রাজ্যের কথা শোনে। এর ফলে যুযুধান পরিস্থিতি তৈরি হয়।"