সাড়া ফেলেছে ‘শ্রমিক মা দুর্গা’
২৩ অক্টোবর ২০২০কপালের তৃতীয় নয়ন বুঝিয়ে দিচ্ছে এই নারী সাধারণ মানুষ নয়, দেবী৷ কিন্তু তাঁর বেশভূষা নিম্নবিত্ত শ্রমিক পরিবারের কোনো মায়ের মতো৷ তাঁর কোলে একটি শিশু৷ মায়ের সঙ্গে সেই শিশুও ঝুঁকে পড়ে দেখছে পিছন দিকে৷ সঙ্গে মহিলার দুই বালিকা কন্যা৷ তারাও দেখছে পিছন ঘুরে৷ এর পরেও যেটুকু বোঝার বাকি থাকে, তা সম্পূর্ণ করে দিচ্ছে এই পরিবারের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত চালের বস্তা, যার গায়ে লেখা ‘ত্রাণ’৷ এবার পুজো শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই অভিনব দুর্গা মুর্তি নিয়ে আলোড়ন পড়ে গেছে সারা দেশে, যেখানে মা দুর্গা এক স–সন্তান শ্রমিকমাতার চেহারায়৷
দু'ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই দেবীমূর্তি দেখে৷ দুই বিপরীত মেরুর প্রতিক্রিয়া৷ ব্যাপক প্রশংসা এবং প্রবল নিন্দা৷ সাধারণ মানুষ, যাঁরা লক ডাউনের সময় অভিবাসী শ্রমিক পরিবারগুলির দুর্দশায় সমব্যথী হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই একাত্মবোধ করছেন শিল্পীর ভাবনার সঙ্গে৷ এমনকি মুম্বইয়ের হিন্দি ছবির একাধিক নায়িকা এই মূর্তির ছবি দিয়ে টুইট করেছেন, যে এই কারণেই বাংলা এবং বাঙালি অন্যরকম৷ তাদের ধর্মীয় উৎসবেও সমাজচেতনার প্রতিফলন ঘটে৷ আর অন্য দিকে এক দল মনে করছে, অ-বিজেপি শাসিত পশ্চিমবঙ্গে এমন দুর্গা প্রতিমা গড়ার পিছনে নিশ্চিত রাজনীতি আছে৷
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের ঘূর্নি অঞ্চলের শিল্পীদের তৈরি মাটির মূর্তি বিশ্ববিখ্যাত৷ সেই ঘূর্নিরই মানুষ এই প্রতিমা যিনি তৈরি করেছেন, সেই পল্লব ভৌমিক৷ তিনি জানালেন, পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলির দুর্দশার কথা তো ছিলই তাঁর সিনিয়র শিল্পী রিন্টু দাশের মাথায়, যাঁর ভাবনা থেকে এই প্রতিমার নির্মাণ৷ কিন্তু করোনার আবহে পুজো নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বাজেট হঠাৎই কমে যাওয়াও আরেক কারণ৷ পল্লবের কথায়, ‘‘প্রথমে অন্য ভাবনা ছিল৷ তার পরে এই লক ডাউন, আদৌ পুজোর কাজ হবে কি হবে না— তার পরে ক্লাব কমিটির কাছে যাই৷ ক্লাব কমিটিও পুজো হবে কি না, সেই নিয়ে অনিশ্চিত ছিল৷ (তার আগে) তারা কিছু চাল বিতরণ করেছিল৷ সেই চালের কিছু খালি বস্তা ছিল৷ ওরা আমাদের বলল, এবার পয়সাকড়ি বেশি নেই৷ এই খালি চালের বস্তা আছে, এগুলো দিয়ে যদি কিছু ভাবতে পারো৷’’
অভিনব এই দুর্গামূর্তির কথা যিনি প্রথম ভেবেছেন, সেই রিন্টু দাশ যদিও সরাসরি বললেন যে, এবার তাঁরা ভেবেছিলেন, যদি পুজো করতেই হয়, তা হলে মানুষের পুজো করবেন৷ তাঁর নিজের কথায়, ‘‘যেই দুর্গা হেঁটে চলেছে রাতের পর রাত, একটু খাবার পায়নি, জল পায়নি, তার পুজো আমি করব!’’ আর যারা এই মানবী-দুর্গার সমালোচনা করছে, তাদের কিনি কী বলতে চান?রিন্টু দাশের সোজা কথা, ‘‘আমি একজন শিল্পী, সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে৷ কোনটা ভালো দিক, কোনটা খারাপ দিক, সেটা তুলে ধরার অধিকার আমার আছে৷ আমি সেটাই করেছি৷ এটা আমার মনে ব্যথা দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে, আমার মনে হয়েছে এটা নিয়ে কাজ করা দরকার, তাই করেছি৷ এখন সেটা কারো খারাপ লাগতেই পারে৷ তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু আমার ভাবনাটা তুলে ধরবো আমি৷’’
১৬ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...