1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাল উদ্যোগ

৭ মার্চ ২০১৩

হরতাল এবং হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি চলছে অনেক দিন ধরে৷ তবে জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ হরতালে ধ্বংস হয়েছে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি৷ গোলাম রাব্বানী তাঁর এলাকায় এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/17sGS
ছবি: Reuters

২০০৬ সালে পল্লী বিদ্যুতের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন গোলাম রাব্বানী৷ সে আন্দোলন সারা দেশে সাড়া জাগিয়েছিল, কিন্তু সাড়া জাগাতে গিয়ে কোনো রকমের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়াতে হয়নি৷ সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের মামলায় একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বেশ কিছু অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি হওয়ার পর দেশের বেশ কিছু জায়গায় হরতালের ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামী৷ হরতালের সময় চালানো হয় বীভৎস তাণ্ডব৷ কয়েকদিনে অন্তত ৮০ জন মারা গেছে সারা দেশে৷ নিহতদের বেশির ভাগই শিবির কর্মী৷ বাংলাদেশের ২-৩টি সংবাদ পত্র এবং টেলিভিশন ছাড়া বাকি সব সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী শিবির কর্মীরা মারা গেছেন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করার সময়৷ তাঁদের হামলায় তখন পুলিশও নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন৷

Delwar Hossain Sayedee Kriegsverbrechen Todesurteil Bangladesch
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘‘হরতাল হলেও জ্বালাও-পোড়াও, মারামারি আর নয়’’ছবি: AFP/Getty Images

রাষ্ট্রীয় সম্পদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে৷ গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার জামায়াত-শিবির কর্মীরা ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালায় সেখানে৷ পুড়িয়ে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সদর দপ্তর, বিদ্যুত কেন্দ্র ও সংলগ্ন আবাসিক এলাকা৷ আশপাশের অনেক এলাকাতেই এমন ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা গেছে স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের৷ গোলাম রাব্বানী দাঁড়িয়েছেন এমন তৎপরতার বিরুদ্ধে৷

একা দাঁড়াননি৷ জামায়াত-শিবিরের দু দিনের ধ্বংসযজ্ঞের পরের দিন, অর্থাৎ শনিবারই তাঁর বাড়ির সামনে পুকুরিয়া, বাগাদিপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বসেন আলোচনায়৷ সেখানে সবার কাছ থেকে শোনেন হরতালে কার কতটা ক্ষতি হয়েছে এবং জানতে চান যেখানে হরতাল করার মতো সবার হরতাল না করারও অধিকার রয়েছে সেখানে এমন ধ্বংসের খেলা চলবে কেন রাজনীতিতে? সঙ্গে আহ্বান জানান, হরতালের ক্ষতি এড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে৷

সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলন

সভায় সরকারি এবং বিরোধী দলগুলোর নেতারাও ছিলেন৷ তাঁদের কাছে চাওয়া হয়, এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অঙ্গীকার৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে শুরু করে উপস্থিত প্রত্যেকটি দলের নেতা-কর্মীরাই গোলাম রাব্বানীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন৷ গত মঙ্গলবারও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে সারা দেশে৷ হরতালের সময় গোলাম রাব্বানীর এলাকায় কোনো পিকেটিংও হয়নি৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গোলাম রাব্বানী জানালেন, অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সংস্কৃতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই তাঁর প্রত্যাশা৷

Bangladesh Protste Aktivisten der Jamaat-e-Islami Partei
ছবি: Reuters

তাঁর এ প্রত্যাশা অমূলক নয় মোটেই৷ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সহিংস হরতালের বিরুদ্ধে সভা হয়েছে দেশের আরো কয়েকটি অঞ্চলে৷ সে সব জায়গায় যে বড় বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠিত নেতারাই অংশ নিয়েছেন তা-ই নয়৷ একেবারে অচেনা, অখ্যাত লোকরাও সোচ্চার হচ্ছেন অহিংস রাজনীতির দাবিতে৷ আব্দুল কাদের চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোপালনগর মোড়ের এক ডিম ব্যবসায়ী৷ সামান্য পুঁজির ব্যবসা৷ হরতালে বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ রাখতে হয়৷ দোকান খুললে হরতালকারীরা এসে হামলা চালায়, তাই বন্ধ না রেখে উপায়ও নেই৷ তবে এখন আর ‘উপায় নেই' বলে বসে নেই আব্দুল কাদের৷ তিনিও এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করেছেন৷ স্থানীয় নেতৃবৃন্দও হাজির ছিলেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে৷ ওই সভা থেকেও বেরিয়ে এসেছে একই সিদ্ধান্ত, ‘‘হরতাল হলেও জ্বালাও-পোড়াও, মারামারি আর নয়৷'' ওই সভার পর আব্দুল কাদেরের দোকান আর বন্ধ হয়নি, ডিম বিক্রি করে সংসার চালানোর পথে এখন তাই আর কোনো বাধা নেই৷

ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গোলাম রাব্বানী জানালেন, তিনি মনে করেন, যাঁরা দেশের এবং মানুষের স্বার্থের কথা ভাবেন, তাঁরাই দেশের বন্ধু আর যাঁরা দেশের সম্পদ, সংখ্যালঘুদের বাড়ি, রাস্তার যানবাহন পোড়ান তারা দেশের দেশের তো বটেই, ইসলাম এবং মানবতারও শত্রু৷''

সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য