বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী'
২৪ আগস্ট ২০২১গত মাসে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল, বেলজিয়ামের পূর্বাঞ্চল, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ ও সুইজারল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখা গেছে৷ ১২ ও ১৫ই জুলাইয়ের বিপর্যয়ের কারণে শুধু জার্মানি ও বেলজিয়ামে কমপক্ষে ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ বিপর্যস্ত এলাকায় এখনো স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে নি৷ সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার মাধ্যমে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ চলছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, এমন ঘটনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কতটা দায়ী?
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরও ঘনঘন ঘটছে৷ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন ইনিশিয়েটিভ' নামের উদ্যোগের আওতায় এই গবেষণা চালানো হয়েছিল৷ এর আওতায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে এখনো পর্যন্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক বৃষ্টিপাতের ঘটনা বাড়ছে৷ অথচ অতীতে প্রতি ৪০০ বছরে এমন ধ্বংসলীলা দেখা যেত৷ গবেষণার ফল অনুযায়ী গড় তাপমাত্রা মাত্র শূন্য দশমিক আট শতাংশ বাড়লেই সেই সময়সীমা ৩০০ বছর পর পর বড় আকারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে৷ সেইসঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও বেড়ে চলেছে৷ তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা মানুষের কার্যকলাপের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনকেই এমন বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করছেন৷
পশ্চিম ইউরোপের বিপর্যস্ত এলাকায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা মাত্র এক দিনে তিন শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯ শতাংশ ছুঁয়েছিল৷ একই সময়কালে গড় তাপমাত্রা এক দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রা মাত্র এক ডিগ্রি বাড়লেই বাতাস বাড়তি সাত শতাংশ পানি শুষে নিতে পারে৷ স্বাভাবিকভাবে সেই পানি ছাড়া হলে প্রবল বৃষ্টিপাত অনিবার্য৷ ইউরোপের ছয়টি দেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ জন গবেষক ইউরোপের সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক পূর্বাভাস দিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এমন ঘটনার আশঙ্কা এক দশমিক দুই শতাংশ থেকে নয় গুণ বাড়তে পারে৷ এমন পরিস্থিতি এড়াতে সব দেশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর চেষ্টা চালাতে হবে এবং এমন বিপর্যয়ের জন্য আরও প্রস্তুতি নিতে হবে৷
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য জার্মানির আবহাওয়া দফতর ডিডাব্লিউডি-র বিশেষজ্ঞ ফ্রাংক ক্লাইয়েনকাম্প বলেন, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক জলবায়ু সংক্রান্ত রিপোর্টের সঙ্গে এই গবেষণার ফল মিলে যাচ্ছে৷ তাঁর মতে, মানুষই যে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন করছে ও এই গ্রহকে আরও উষ্ণ করে তুলছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এমন উষ্ণায়নের কারণে আরও ঘনঘন চরম আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্রিডেরিকে অটো বলেন, ইউরোপের সাম্প্রতিক বন্যা স্পষ্ট দেখিয়ে দিয়েছে যে এমনকি শিল্পোন্নত দেশগুলিও চরম আবহাওয়ার প্রভাব এড়াতে পারে না৷ বিজ্ঞান জগত বহু বছর ধরে সাবধান করে দিলেও বাস্তবে টনক নড়েনি৷ এবার জরুরি এই আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সময় এসে গেছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এপি)