সন্ত্রাসের জনপদে প্রধানমন্ত্রী
২০ জানুয়ারি ২০১৪
গত এক বছর ধরে সন্ত্রাসের জনপদ বলে আলোচনায় উঠে আসা সাতক্ষীরা সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সফরকালে তিনি বললেন, সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ থাকবে না৷ তবে অব্যাহত থাকবে যৌথ বাহিনীর অভিযান৷
বাংলাদেশের দক্ষিণে সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলাকে বলা হয়ে থাকে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এলাকা৷ যা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায় যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়ার পর৷ সেই রায়ের পর যে কয়েকটি জেলায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, তার মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম৷ এছাড়া, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পরও সাতক্ষীরায় ব্যাপক সহিংসতা হয়৷ সাতক্ষীরা শহর থেকে জেলার অন্যান্য উপজেলা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়৷ সড়ক কেটে, গাছ ফেলে এবং পাহারা বসিয়ে এক ধরণের নিজস্ব আধিপত্য কায়েম করা হয় সেখানে৷ বাইরের মানুষ তো দূরের কথা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন না৷ সাংবাদিকরাও যেতে পারতেন না বিচ্ছিন্ন ঐ জনপদে৷ যেতে চাইলে তাঁদের পথে পথে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হতো৷ গত ১০ মাসে সেখানে নারী, শিশু, মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিকসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন৷ কয়েকশ বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ আর নির্বাচনের আগে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পরও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি৷ অভিযানে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে, তারা দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধের মুখেও পড়েছেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সাতক্ষীরা গিয়ে প্রথমেই সার্কিট হাউজে জামায়াত-শিবিরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেন, সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ থাকবে না৷ তার জন্য যা করার তা করবে সরকার৷ একই সঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন ভুক্তভোগী৷ আমার বাবা-মা, ভাই-বোনসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে৷ আমি রাজনীতি করি তাঁদের জন্য, যাঁরা এ দেশে নিষ্পেশিত নির্যাতিত৷''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিএনপি-জামায়াতের কারণে দেশে যে সহিংসতা, মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না৷'' হতাহতের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতনকারীরা দেশের যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে৷ আপনাদের আমি স্বজন ফিরিয়ে দিতে পারবো না৷ তবে হত্যাকারী এবং হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করবো৷''
প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহত ১৬ জনের পরিবারসহ ১৫৪ জনের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন৷ যাঁদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে বা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তা পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় বক্তৃতা দেন৷ সেখানে তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ তাই জামায়াতের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছেন খালেদা জিয়া৷ তিনি বলেন, একাত্তরে যারা হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সেই জামায়াত এখন বিএনপির দোসর৷ বিএিনপি-জামায়াত দেশে সহিংসতা আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়৷ কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হবে না, জানান প্রধানমন্ত্রী৷
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর সাতক্ষীরা সফরের কারণে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়৷