সাংবাদিক সংগঠনগুলো কার স্বার্থে?
২১ মে ২০২১রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে দুপুরে সচিবালয়ে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাত পর্যন্ত তেমন কোনো সাংবাদিক নেতাকে মাঠে দেখা যায়নি৷ শুধু সক্রিয় দেখা গেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা দীপ আজাদসহ কয়েক জনকে৷ সংগঠনগুলোর কোনো কোনো নেতা অবশ্য ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দিয়েই দায়িত্ব সেরেছেন৷ তবে সাধারণ ও মাঠের সাংবাদিকরা শুরু থেকেই প্রতিবাদমুখর ছিলেন৷ সারা রাত তারা থানায় অবস্থান করেন৷
মাঠের সাংবাদিকদের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখে পরদিন বিকেলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একটি বিবৃতি দেয়৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান দাবি করেন, ‘‘সাংগঠনিকভাবে বিবৃতিতে দিতে হলে একটি প্রক্রিয়ায়র মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে কারণে একটু দেরি হয়েছে৷’’
আর সংঠনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মাঠের সাংবাদিকদের সঙ্গে অবস্থান নেয়া ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, ‘‘সাংবাদিক নেতারা এবং সিনিয়র সাংবাদিকরা যদি শুরু থেকেই তৎপর হতেন তাহলে পরিস্থিতি হয়ত ভিন্ন হতে পারতো৷ আমার মনে হয় প্রথম আলো যেহেতু তাদের সংবাদকর্মীদের সাংবাদিক ইউনিয়ন করাকে নিরুৎসাহিত করে এবং ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডে তারা অংশ নেয় না, তাই তারাও একটু ধীরে চলো নীতিতে গিয়েছেন৷ আর প্রথম আলোর ভূমিকা নিয়ে ইউনিয়নের মধ্যে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ সেকারণেই হয়ত এরকম হয়েছে৷’’
দীপ আজাদ অবশ্য ওই দিন কয়েকজন সাংবাদিক নেতাকে ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া পাননি বলে জানান৷
শুরু থেকেই প্রতিবাদ আর আন্দোলনে সক্রিয়দের মধ্যে আরেকজন হলেন একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন৷ তিনি নিজেও ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন৷ আর তাকে বরাবরই সাংবাদিকদের জন্য মাঠে থাকতে দেখা যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন আমরা ইউনিয়ন বা সাংবাদিক নেতাদের সহায়তা পাই না, তখন আমরা মাঠের সাংবাদিকরাই নেমে যাই৷ তাদের জন্য অপেক্ষা করি না৷ আমাদের কথা তো আমাদেরই বলতে হবে৷ কারুর দিকে তাকিয়ে থাকলে তো চলবে না৷’’
২০১২ সালে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সময়ও দেখা গেছে নেতারা আগে এগিয়ে আসেননি৷ পরে সবাই এগিয়ে এলেও এখন তাদের মৃত্যুবার্ষিকীতেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ হত্যাকাণ্ডের বিচার তো দূরের কথা এত বছরে চার্জশিটও হয়নি৷
আর এর কারণ হিসেবে সাংবাদিক নেতা ও সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক বিভক্তি ও সুযোগ-সুবিধার লোভকেই দায়ী করেছেন সয়ং সাংবাদিক নেতারাই৷ এমনকি এখন সাংবাদিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পদবিও গ্রহণ করেন৷ আর সাংবাদিক ইউনিয়ন অনেক দিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনটি-জামায়তপন্থি এই দুই ভাগে বিভক্ত৷ তারা কথা বলেন কোন দলের সরকার ক্ষমতায়, তা দেখে৷
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান মনে করেন, ‘‘সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর রাজনৈতিক বিভক্তি এবং কিছু সাংবাদিক নেতার বৈষয়িক স্বার্থ এর জন্য দায়ী৷ যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের কাছ থেকে প্লট, আর্থিক সুবিধাসহ নানা স্বার্থের বিষয় থাকে৷ এমনকি ক্ষমতাসীনদের সুনজরে থাকলে সংবাদমাধ্যমে ভালো চাকরি পাওয়া যায়৷ উল্টোটা হলে চাকরি হারাতে হয়৷’’
তবে তিনি স্বীকার করেন, এরশাদের আমল থেকেই এই প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে৷ তারপর সাংবাদিক নেতাদের রাজনৈতিক বিভক্তি এবং সুবিধা নেয়ার প্রবণতা তীব্র হয়েছে৷
দুই গ্রুপের সাংবাদিক নেতাদের কেউ কেউ সরাসরি আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পদে আছেন৷ এটাকে দুঃখজনক বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের কেউ কেউ এটা করে অনেক ধন-সম্পদের মালিক হয়েছে৷ যদি স্বাধীন তদন্ত করা হয়, তাহলে তাদের চেহারা প্রকাশ পাবে৷'' ইলিয়াস খান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সদস্য৷
তবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান মনে করেন, ‘‘সাংবাদিকরা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বা রাজনৈতিক দলের সদস্য হতেই পারেন৷ এটা তাদের অধিকার৷ কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তাকে পেশাদার ও সাংবাদিকদের স্বার্থ এবং অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ এটার জন্যই আমরা চেষ্টা করছি৷’’
তার দাবি , ‘‘ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়ন সব সময়ই সাংবাদিকদের পক্ষে কাজ করছে৷’’