1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকদের সঙ্গে শেষ বৈঠক বিতর্ক

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিন দফা বৈঠকের পর কথা ছিল ডিজিটাল সিকিউরিট বিল সংসদে পাসের আগে সাংবাদিকদের সাথে আরেক দফা বৈঠক হবে৷ কিন্তু সেটা হয়নি বলে দাবি সাংবাদিক নেতাদের৷ সংসদে বিল পাসের দিন বলা হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/35Ibh
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg

এই অবস্থায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিৃবতি দেয়া হবে শনিবার৷ সম্পাদক পরিষদ, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এটকো এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এই বিবৃতি দেবে৷ তাঁদের প্রতিনিধিরাই এর আগে তিন দফা বৈঠক করেছিলেন আইনমন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির সঙ্গে৷ শুক্রবার এই তিন সংগঠনের নেতারা এ নিয়ে প্রাথমিক করেছেন৷ তাঁরা মনে করেন, আইন নিয়ে তাদের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন৷ শনিবার বিবৃতির মাধ্যমে তা স্পষ্ট করা হবে বলে ডয়চে ভেলেকে বলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদ নঈম নিজাম৷ এদিকে একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘এখানে অবশ্যই অস্পষ্টতা আছে৷ সংসদে বিল পাসের আগে আমাদের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির আরো একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সেই বৈঠক না করেই সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিল পাস করা হয়৷''গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮'-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা৷ এরপর গত ৯ এপ্রিল এই আইনের খসড়া সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার৷ ঐ দিনই বিলটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে পাঠানো হয়৷ ১৭ সেপ্টেম্বর সংদীয় কমিটি সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয়৷ বুধবার বিলটি সংসদে  উত্থাপন এবং পাস করা হয়৷এই আইনের ৩২ ধরা নিয়ে সাংবাদিকদের তীব্র আপত্তি ছিল৷ তবে ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৪৩ ধারা নিয়েও আপত্তি জানানো হয়৷ সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এ নিয়ে সাংবাদিকরা দুই দফা বৈঠক করেন৷ আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও একবার বৈঠক হয়৷ একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে বৈঠকের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে নিশ্চয়ই অস্পষ্টতা আছে৷ কারণ আদের সঙ্গে প্রথম যে বৈঠক হয় সেখানে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন৷ আমরা বলি এটা পড়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের বক্তব্য জানাব৷ এরপরের বৈঠকে আমরা কিছু আপত্তি দেই৷ তখন বলা হলো আমাদের হাতে খসড়া আছে৷ আপনাদের লিখিত মতামত পেলাম৷ আমরা এই দু'টি মিলিয়ে আরেক দফা বৈঠকে বসব৷ এরমধ্যে সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে যায়৷ তখন বলা হলো সংসদ অধিবেশন যেহেতু শেষ হয়ে গেছে৷ আমরা পরে এটা নিয়ে কথা বলব৷ এরমধ্যে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম৷ আইনমন্ত্রী আমাদের কথা শুনলেন এবং বললেন এগুলো আমি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিয়ে যাব৷ তৃতীয় দফা বৈঠকে সব ফয়সালা হবে৷ তৃতীয় বৈঠকটি না করেই সংসদীয় কমিটি খসড়া সংসদে নিয়ে গেল৷ তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়ায় আইনের খসড়া এবং আমাদের লিখিত প্রস্তাব এই দু'টি মিলিয়ে কী হলো তা আমরা দেখতে পারিনি৷’’

সংসদে চূড়ান্ত বিলটি উপস্থাপনের আগে আমরা বুঝতে পারিনি: বুলবুল

তিনি বলেন, ‘‘যার ফলে আমাদের আপত্তি আমরা যা প্রস্তাব করেছি তার কিছু কিছু অংশ সংশোধন হয়েছে৷ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়নি৷ আবার কিছু কিছু অংশ আছে, যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা হয় নাই৷ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী যখন সংসদে বলেছেন সাংবাদিকদের সকল প্রস্তাব অ্যাকোমোডেট করা হয়েছে সেটি তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়ার কারণে ওই গ্যাপটি আমাদের মধ্যে আছে৷ আসলে সংসদে চূড়ান্ত বিলটি উপস্থাপনের আগে আমরা বুঝতে পারিনি৷’’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘‘আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলাম৷ আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়নি৷ আমরা শনিবার বৈঠক করে আইনটি পাশের পর এখন আমাদের অবস্থানও জানাব৷ এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দেয়া হবে৷’’

সংসদে উত্থাপিত বিলের যে ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল তাতে তখন বলা হয়, ‘সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷’’

আইনটিতে ৫৭ ধারার আপত্তিকর বিষয়গুলো আসলে বাদ দেয়া হয়নি: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

সংসদীয় সুপারিশের পর সংসদে আইন হিসেবে যা পাস হয়েছে তা হলো: যদি কোনো ব্যক্তি ‘দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন-১৯২৩'-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত করে বা করতে সহায়তা করে তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷

বুধবার আইনটি পাশের দিন মনজুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘৩২ ধরা যেটা নিয়ে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় আপত্তি৷ সেখানে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টটাকে এনেছে৷ তথ্য অধিকার আইন যখন তৈরি হয় তখন বলা হয়েছে অবাধ তথ্য প্রবাহের স্বার্থে তথ্য অধিকার আইন সবচেয়ে বড় হবে৷ অন্য কোনো আইন তাকে বাধা দিতে পারবে না৷ কিন্তু এখন তথ্য অধিকার আইনও আনা হলো আবার অফিসিয়িাল সিক্রেটস আইনকে নিয়ে আসা হলো৷ যে আইনটি তথ্য অধিকার আইনের কারণে আইনটি অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু তাকে নতুন করে গুরুত্ব দিয়ে ফিরিয়ে আনা হলো, যা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থায় চলে গেল৷’’

সেই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়নি: নঈম নিজাম

আর নঈম নিজাম বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ধেযা সংশোধনীগুলো গ্রহণ না করায় আমরা মনে করি আইনটি একটি কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত হবে৷ ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ফিরিয়ে আনা কোনোভাবে সাংবাদিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না৷ আর মানুষের যে কথা বলার অধিকার, প্রতিবাদ করার অধিকার এটাকে আইন দিয়ে বন্ধ করা যাবে না৷ এই আইনে অনেকগুলো ধারা আছে যা সাংবাদিকদের ক্ষতি ডেকে আনবে৷’’

শুক্রবার আইনজীবী ও মানবাদিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই আইনটিতে ৫৭ ধারার আপত্তিকর বিষয়গুলোকে আসলে বাদ দেয়া হয়নি৷ একাথিক ধারার মধ্যে তা রাখা হয়েছে৷ ৫৭ ধারা ব্যবহারের আগে এর ভয়াবহ দিক বোঝা যায়নি৷ ডিজিটাল আইনও ভয়াবহ৷ এটা মানুষের মধ্যে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ৩২ ধারার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনায় সাংবাদিকদের জন্য সংকট তৈরি হবে৷ তাঁরা কখন কোন মামলায় আটকে যান, তা নিয়ে ভয়ে থাকবেন৷ অনুসন্ধানী শুধু নয়, সব ধরনের সাংবাদিকতাই আইনের বেড়াজালে পড়ে যাবে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন নাগরিকদের মত প্রকাশের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্মে পরিণত  হয়েছে৷ সভা সমাবেশ বা অন্য কোনোভাবে মত প্রকাশ কঠিন হওয়ায় নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন৷ এই আইনের মাধ্যমে সেটা সংকুচিত করা সম্ভব হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য