1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকদের 'দুই পয়সার প্রেস' বললেন মহুয়া মৈত্র

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৮ ডিসেম্বর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদজগতে আলোড়ন ফেলে দিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সংবাদিকদের 'দুই পয়সার প্রেস' বলে।

https://p.dw.com/p/3mOBg
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের বিষোদগার পশ্চিমবঙ্গে নতুন নয়। আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মতো এতটা চাঁচাছোলা ভাষায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে 'কুকথা' বলে, পরে দুঃখপ্রকাশের নাম করে চরম ব্যঙ্গ সচরাচর কোনো রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে করেননি। রোববার নদিয়ার গয়েশপুরে দলীয় কর্মীদের সভায় সাংবাদিকদের তিনি 'দুই পয়সার প্রেস' বলেন। তাঁর মন্তব্য নিয়ে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়ার পর তিনি সামাজিক মাধ্যমেই জানান, 'অন্যের আবেগে আঘাত করতে পারে, এমন কুকথা অথচ সঠিক কথা বলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।' সেই সঙ্গে একটি দুই পয়সার ছবি দিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন, ''মাই মিম এডিটিং স্কিলস আর ইমপ্রুভিং।'' 

অর্থাৎ, তৃণমূল সাংসদ তির্যকভাবে আবার একইভাবে সাংবাদিকদের তুলোধুনা করার চেষ্টা করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের সংবাদশিকারীরা  সত্যিই দুই পয়সার সাংবাদিক। তিনি সত্যি কথাটা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের গায়ে লাগছে। 

গয়েশপুরে মহুয়া মৈত্র দলীয় কর্মীদের নিয়ে সভা করছিলেন। সেখানে ভিতরে কয়েকজন সাংবাদিক ঢুকে পড়েন। কেউ তাঁদের বাধা দেননি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তঁদের একজনকে দেখে মহুয়া জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কে? তিনি জবাব দেন, প্রেস। মহুয়া বলেন, আপনাকে কে ঢুকতে দিল? বেরিয়ে যান। খুব শ্রুতিমধুরভাবে কথাগুলো বলেননি তিনি।

এর একটু পরে তিনি দলের কর্মীদের বলেন, ''এই দুই পয়সার প্রেসকে ভিতরে কে ডেকেছে? কর্মী সভা হচ্ছে। সেখানে কাগজে ও টিভিতে মুখ দেখানোর এত শখ?''  মিটিং-এর বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা সে কথা শুনতে পান ও রেকর্ডও করেন। তারপর শুরু হয় মহুয়া মৈত্রের এই কথা নিয়ে আলোড়ন। কলকাতা প্রেস ক্লাবের তরফে লিখিত বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়, মহুয়া মৈত্রকে তাঁর এই কথা প্রত্যাহার করতে হবে ও দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে যায় তাঁর মন্তব্যের সমালোচনায়।

প্রশ্ন হলো, মহুয়া কেন এই ধরনের কথা বললেন, তাঁর কথাকে কতটা গুরুত্ব দেয়া উচিত? প্রবীণ সাংবাদিকশুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদদের কথাবার্তার গুরুত্ব এতটা হয়নি যে তাঁদের এই ধরনের কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ত্রুটি সব পেশায় থাকে। তবে সাংবাদিকতার থেকে রাজনীতিকদের অবক্ষয় অনেক বেশি। শুভাশিসের মতে, ''জেলার সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেছেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি দিল্লি বা কলকাতায় সম্ভবত এই কথা বলতেন না। এর মধ্যে একটা ভালগার এলিটিজমের ব্যাপার আছে। তিনি বোধহয় করণ থাপার ছাড়া কাউকে সাংবাদিক বলে মনে করেন না। অধিকাংশ সাংবাদিকই ভাগ্য ফেরাতে এই পেশায় আসেননি। অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ভাগ্য ফেরাতেই রাজনীতিতে এসেছেন।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এটা তাঁর ঔদ্ধত্য। রাজনীতিবিদরা এই ঔদ্ধত্য দেখালে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে হয়। রাজনীতিবিদদের কথার উপর সংযম থাকা দরকার। সৌম্যের মতে, ''কেন মহুয়া এমন কথা বললেন তা জানি না। সেখানে দলীয় বিক্ষোভ ছিল। হয়তো তাতে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সচেতন হয়ে চলা উচিত।''

মহুয়ার কথা থেকে পরিষ্কার, তিনি সাংবাদিকদের, অন্তত বাংলার সাংবাদিকদের 'দুই পয়সার প্রেস' বলেই মনে করেন। তাঁর ভাবনার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, সব সাংবাদিকের এক হয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''সাংবাদিকদের যখন প্রেস্টিটিউট বলা হয়, তখন একদল সাংবাদিক মুখর হন, অন্যরা চুপ করে বসে থাকেন। দুই পয়সার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একদল চুপ। এরকম করলে এই ধরনের কথা আমাদের শুনই যেতে হবে।'' জয়ন্ত মনে করেন, ''যাঁরা নিজেরা আজ একটা কথা বলেন, কাল অন্য কথা বলেন, আজ এক দলে, কাল অন্য দলে, তাঁদের কথার কয় পয়সা দাম?''

এই প্রবীণ সাংবাদিকদের মতে, সাংবাদিকদের পেশায় যে সব ভালো, সব ঠিক, তা নয়। কোনো পেশাতেই তা হয় না। শুভাশিসের মতে, এখনো বহু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, ইউ টিউব চ্যানেলে সরকার ও পুলিশের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে নানান ধরনের খবর করে যাচ্ছেন।

সৌম্য মনে করেন, ''জাতীয় মিডিয়ার কাছে মহুয়ার কদর বেশি। কারণ, রাজ্যের সাংসদদের মধ্যে তিনি ভালো কথা বলেন, ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে ও আক্রমণ শানাতে পারেন। তাই জাতীয় টিভিতে তৃণমূল থেকে কাউকে আনতে হলে মহুয়াকে তাঁরা চান। সেখানে দাঁড়িয়ে হয়তো তাঁর ঔদ্ধত্য বেড়ে গেছে। তাঁর বোঝা উচিত, তিনি জনপ্রতিনিধি। কী কথা বলতে হয়, কোথায় কেমন আচরণ করতে হয়, সেটাও তাঁকে শিখতে হবে।'' কারণ যাই হোক, মহুয়া যে অনুচিত কথা বলেছেন, তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।