সাংবাদিককে জেলে পাঠিয়ে ভাবমূর্তি উদ্ধার!
২১ এপ্রিল ২০২১এনটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান আবু তৈয়ব ফেসবুকে লেখালেখি করছিলেন আপনাকে নিয়ে, বলছিলেন মংলা কাস্টমসে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার কথা৷ আপনি মানী লোক, তাতে আপনার মান ইজ্জত আর থাকছিল না৷ আপনার ভাবমূর্তি ভেঙে পড়ছিল ভঙুর কাঁচ অথবা মুড়ি মুড়কির মতো৷
আপনার মতো মানী লোকের মান বাঁচাতেই তো সরকার কী দারুণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে৷ আর কেউ নিশ্চয়ই শুল্ক ফাঁকি বা ভোটের হিসাব গোলমাল নিয়ে কথা বলবেন না ফেসবুকে৷ সফেদ পাঞ্জাবিতে ধোয়া তুলসি পাতা হেন পবিত্র আপনারা, আপনাদের গায়ে দাগ লাগানো অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ৷
অবশ্য একটা বিষয় কী জানেন? আপনার যে ওই স্ট্যাটাসে বা ফেসবুকের তৎপরতায় মান গেছে, তা আমরা বুঝতে পারিনি৷ বুঝেছেন আপনি৷ তাই আমাদের কৌতূহল ঠিক কোন সময় বা কোন অবস্থায় আপনি বুঝতে পারলেন যে, আপনার সম্মানের হানি হচ্ছে? মানে, বিষয়টা খালি চোখে দেখা যায় না বলেই বুঝতে চেষ্টা করছি৷ নাকি কাউকে আপনি বলতে শুনলেন, এই দ্যাখ দ্যাখ, জনাব মুন্সীর লিখায় জনাব খালেকের ভাবমূর্তি ভেঙে গেল৷
আমাদের সাংবাদিকদের আপনি কী বার্তা দিলেন জনাব মেয়র, তা-ও একটু পরিষ্কার করবেন৷ আপনার বিরুদ্ধে লেখা যাবে না, এটাই কি? সত্য মিথ্যার কথায় বলা যায়, এই ডিজিটাল যুগে মিথ্যা সংবাদের প্রচার বাড়লেও প্রসার বাড়েনি৷ আলতো এক টিপেই সত্য আর মিথ্যা আলাদা করা যায়৷ তার জন্য পাইক বরকন্দাজ আর আলো ঝলমলে ডিজিটাল আইন সাধারণত লাগে না৷
আর ভাবমূর্তি বিষয়টাও দারুণ, যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদেরই তা থাকে৷ অন্যদের সম্পর্কে আপনি সত্য-মিথ্যা যা-ই বলেন, তাতে তাদের মান যায় না৷
সদাশয় সরকারকেও অভিনন্দন চমৎকার এই আইনটির জন্য৷ আপনাদের তুমুল জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এর চেয়ে বড় অস্ত্র তো আর হতে পারতো না৷
আপনারা অবশ্য মুখে বলেন, সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য এই আইন নয়, বরং সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল হয়রানি বন্ধ করার জন্যই এই আইন৷ আর এই আইন অবশ্যই বাক-স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক নয়৷
কিন্তু এসব কথা নিশ্চয়ই আপনাদের কৌশল এবং তা এর মধ্যেই দারুণ কার্যকর বলে বিবেচিত৷ সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল হয়রানির জন্য লেখক মুশতাক মরে গেল, কার্টুনিস্ট কিশোর কারাগারে থাকলো এক বছর৷ আর খুলনার মেয়রসহ সংসদ সদস্য, মন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী এইসব সাধারণ মানুষ হয়রানি বা ভাবমূর্তি হারানো থেকে মুক্ত থাকতে পারলেন৷
আপনারা নিশ্চয়ই আরো অভিনন্দন পাচ্ছেন, আকাশে বাতাসে শুনছেন জয়ধ্বনি!