সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর পক্ষে মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে চলমান নৃশংস সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং দেশে বিদ্যমান অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাসে অগ্নিসংযোগ এবং পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা, রেল লাইনচ্যুত করার ঘটনায় সাধারণ নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ কেউ কেউ পুড়ে আহত হচ্ছেন৷ আমরা এ ধরনের জঘণ্যতম কাজকে নিন্দা জানাই এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি৷''
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ ধরনের কাজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছে বলে মেরি হার্ফ উল্লেখ করেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ন্যাক্কারজনক এ ধরনের কাজের কোনো যৌক্তিকতা নেই৷''
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সব বাংলাদেশিই শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের মত প্রকাশের অধিকার রাখেন৷ আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি চালানোর সুযোগ করে দেয়৷ সেই সঙ্গে সব দলের প্রতিও আমরা আহ্বান জানাই যে, তারা যেন তাদের নেতা-কর্মীকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়৷''
ওদিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না নিলে আগামী রবিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে বিএনপি৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ এ কথা জানান৷
পৃথক একটি বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘সরকার সর্বমুখী চাপ ও অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করে তাঁকে জনগণ ও নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেষ্ট৷'' তিনি বলেন, ‘‘কোনো অনৈতিক চাপ বা ভীতির মুখে আমি নত হব না৷ যে কোনো পরিস্থিতি বা পরিণতির জন্য আমি তৈরি আছি৷'' দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার এ বিবৃতিটি পাঠান৷
প্রসঙ্গত, অবরোধের মধ্যে গত ৩০শে জানুয়ারি সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয় বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট৷ এ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই আরো ৩৬ ঘণ্টার হরতাল দেয়া হয়৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যয় এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে৷
এদিকে রবিবার বিএনপি জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে৷ ‘নির্বিচারে নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, বাড়িঘর ভাঙচুর, গণগ্রেপ্তার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের' অভিযোগ তুলে এ সব বন্ধের দাবিতে এ হরতাল ডেকেছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনটি৷
রবিবার থেকে বিএনপি আরো ‘কঠোর' কর্মসূচিতে যাবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ৷ তাঁর এ কথার ব্যাখ্যা ডয়চে ভেলেকে দিয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান৷ তিনি বলেছেন, ‘‘রবিবার থেকে অবরোধের সঙ্গে টানা সাত দিন বা লাগাতার হরতাল দেয়া হতে পারে৷ অবরোধের সঙ্গে লাগাতার হরতাল যুক্ত হলে আন্দোলন সর্বাত্মক হবে৷'' তিনি জানান, ‘‘গণতন্ত্র উদ্ধারে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন৷''
অন্যদিকে সহিংসতা দমনে সরকার আরো কঠোর আইন করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷
সাবেক এই মন্ত্রী শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর৷ সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন আসছে, যাতে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা থাকবে৷ আইনটি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে৷ অচিরেই এর বাস্তবায়ন হবে৷''