সহযোগী ও ভুঁইফোঁড় সংগঠন কথন
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অনেক দলেরই স্বীকৃত সহযোগী সংগঠন আছে৷ এর বাইরে এসব দল ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা, নেতা-নেত্রীর নাম ব্যবহার করে অনেকে ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে তোলেন৷ তাদের কারণে মূল দলগুলো প্রায়ই সমস্যায় পড়ে৷
আওয়ামী লীগ
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আটটি সহযোগী সংগঠন আছে৷ এগুলো হলো মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও মৎস্যজীবী লীগ৷ এর বাইরে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত৷ আর বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো সংগঠন করতে হলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের’ অনুমোদন নেয়ার নিয়ম আছে৷
আওয়ামী লীগের নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠন
২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের নামে অনেক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে উঠেছে৷ এই সংখ্যা তিনশর বেশি হবে৷ এদের অনুমোদন না থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যেই তাদের পৃষ্ঠপোষক আছে৷ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়না৷ এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের দেখা যায়৷ ছবিতে আওয়ামী ওলামা লীগ নামে একটি সংগঠনের কর্মীদের দেখা যাচ্ছে৷
আলোচনায় ওলামা লীগ
২০১৯ সালে আওয়ামী ওলামা লীগ যেসব এনজিও বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য কাজ করছে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল৷ এছাড়া বিপিএলের নামে জুয়া খেলা হচ্ছে দাবি করে বিপিএল বন্ধেরও দাবি করেছিল৷ সেই সময় ‘আওয়ামী ওলামা লীগ’ নামে আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠন নেই বলে জানানো হয়৷ ২০১৬ সালেও আলোচনায় এসেছিল ওলামা লীগ৷ তখন তারা বলেছিল, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেওয়া বিধর্মীদের কাজ৷
‘চাকরিজীবী লীগ’
সম্প্রতি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের পোস্টার ভাইরাল হয়৷ এতে লেখা ছিল ‘জেলা, উপজেলা ও বিদেশী শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে’৷ পোস্টারে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম ও ছবি প্রকাশিত হয়৷ এরপর সমালোচনা শুরু হলে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্যপদ হারান হেলেনা জাহাঙ্গীর৷ বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
শেখ হাসিনাও অবাক!
২০১৮ সালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, নেতা মোদের শেখ মুজিব’ স্লোগান শুনে মঞ্চে থাকা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিকভাবে বলে ওঠেন, ‘‘এটি কী? এটি আবার কবে হলো? আগে তো শুনিনি!’’
বিএনপি
দলের ওয়েবসাইটে অঙ্গ সংগঠন হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দলের নাম রয়েছে৷ আর সহযোগী সংগঠন হিসেবে আছে ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নাম৷
বিএনপির নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠন
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির নামে অনেক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে উঠেছিল৷ দৈনিক প্রথম আলো বলছে, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ২০১২ সালে এমন অন্তত ৪০টি সংগঠনের নাম উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ অবশ্য ২০১৪ নির্বাচনের পর এসব সংগঠনের তৎপরতা কমেছে৷ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিএনপি জানিয়েছে, ‘শহীদ জিয়া ছাত্র পরিষদ’ নামের সংগঠনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷
জাতীয় পার্টি
দলের ওয়েবসাইটে অঙ্গ সংগঠন হিসেবে জাতীয় যুব সংহতি, মহিলা পার্টি, কৃষক পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, ওলামা পার্টি, সাংস্কৃতিক পার্টি, জাতীয় প্রাক্তন সৈনিক পার্টি ও জাতীয় তরুণ পার্টির নাম রয়েছে৷ এছাড়া সহযোগী সংগঠন আছে সাতটি৷ এগুলো হলো শ্রমিক পার্টি, আউনজীবী ফেডারেশন, ছাত্র সমাজ, মৎস্যজীবী পার্টি, তাঁতী পার্টি, মটর শ্রমিক পার্টি ও হকার্স পার্টি৷
জামায়াতে ইসলামী
দলের ওয়েবসাইটে ‘জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র’ বলে একটি পাতা রয়েছে৷ সেখানে গঠনতন্ত্র ডাউনলোড করার একটি লিংক রয়েছে, যেটিতে ক্লিক করলে ফাইল পাওয়া যায় না৷ তবে দলটির সহযোগী সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পরিচিতি রয়েছে৷ যদিও ২০১০ সালে জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছিল, ছাত্রশিবির তাদের অঙ্গ সংগঠন নয়৷ এর বাইরে শিশুদের সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’ জামায়াতের অর্থায়নে চলে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
একাদশ সংসদে এই দলের দুজন সাংসদ আছেন৷ ওয়ার্কার্স পার্টির ওয়েবসাইট অনুযায়ী দলের গণ ও শ্রেণি সংগঠনগুলো হলো জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন৷