1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সস্তায় পোশাক?

গ্যুনথার বির্কেনশ্টক/আরবি৭ ডিসেম্বর ২০১২

টি-শার্ট পাঁচ ইউরো, ট্রাউজার দশ ইউরো, জার্মানির ক্রেতারা এত সস্তায় পোশাক পাচ্ছেন কিসের বিনিময়ে? এই প্রশ্নটি আবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের এক পোশাক কারখানায় ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের পরে৷ যা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে খুব৷

https://p.dw.com/p/16xNB
Bangladeshis and firefighters battle a fire at a garment factory in the Savar neighborhood in Dhaka, Bangladesh, late Saturday, Nov. 24, 2012. An official said firefighters have recovered more than 100 bodies after a fire raced through the multi-story garment factory just outside Bangladesh's capital. (Foto:Polash Khan/AP/dapd)/eingst. fab
ছবি: dapd

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি পোশাক কারখানায় আগুন লেগে প্রাণহানি ঘটেছে শতাধিক শ্রমিকের, আহতও হয়েছেন অনেকে৷ এই ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটলে পশ্চিমা দেশগুলির দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিও এসে যায়৷ কেন না তারাই সস্তায় পোশাক আমদানি করে লাভবান হচ্ছে বেশি৷

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় একটি নয়তলা ভবনের পোশাক কারখানায় আগুন লেগে মর্মস্পর্শী এই দুর্ঘটনাটি ঘটে৷ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশেই কারখানাগুলিতে দুর্ঘটনা না ঘটলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না৷

অধিকাংশ কারখানাই ঝুঁকিপূর্ণ

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ৷ অপর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের অভাব, সরু সিঁড়ি, জরুরি নির্গমনের সুব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন তলায় তালা লাগানো, অলি-গলিতে বা জলাশয় ভরাট করে ত্রুটিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ, তদারকির অভাব, অপ্রতুল পানির পাম্প, গুদামঘরে বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক লাইন ইত্যাদি ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে এই ঝুঁকি৷

গত সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের একটি পোশাক কারখানায় একই ধরনের ‘ট্র্যাজেডি' ঘটে যায়৷ আগুন লেগে ২৫০ জনেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়৷ সেখানেও নিরাপত্তার সুব্যবস্থা ছিল না৷ জরুরি পথগুলি রুদ্ধ থাকায় আগুনের ব্যাপকতা তীব্র হয়ে উঠেছিল৷ জানা যায়, ওই কারখানাটি বিশেষ করে জার্মান পোশাকের ডিসকাউন্টার কিক-এর জন্য পোশাক প্রস্তুত করতো৷ দুর্ঘটনাটি পশ্চিমের দেশগুলির ভোক্তাদের মধ্যেও আলোড়ন তোলে৷ সুলভ মূল্যে পোশাকের বিনিময়ে দরিদ্র দেশের শ্রমিকদের কতটা মূল্য দিতে হয়, তা তাদের চোখের সামনে চলে আসে৷ কিক অবশ্য সাথে সাথে তৎপর হয়, গঠন করে দুর্ঘটনাকবলিত পরিবারের সহায়তার জন্য ৫০০,০০০ মার্কিন ডলারের একটি জরুরি সাহায্য তহবিল৷ এই অঙ্ককে দ্বিগুণ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে এখন৷

প্রশংসনীয় তবে পর্যাপ্ত নয়

এই তত্পরতা অবশ্যই প্রশংসনীয়, বলেন সাউথউইন্ড-এর মুখপাত্র সাবিনে ফ্যারেনশিল্ড৷ বিশ্বব্যাপী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ‘সাউথউইন্ড'৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ফ্যারেনশিল্ড জানান, ‘‘তবে এই সহায়তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়৷ এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব রয়েছে৷ কেননা বারবার ঘটে যাচ্ছে এই ধরনের দুর্ঘটনা৷ কারখানাগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বহু শ্রমিক প্রাণ হারাচ্ছেন৷''

A worker visits a burnt garment factory after a fire which killed more than a hundred people, in Savar November 26, 2012. Thousands of angry textile workers demonstrated in the outskirts of Dhaka on Monday after a fire swept through a garment workshop at the weekend, killing more than 100 people in Bangladesh's worst-ever factory blaze. REUTERS/Andrew Biraj (BANGLADESH - Tags: DISASTER BUSINESS EMPLOYMENT TEXTILE)
ছবি: Reuters

একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, জার্মান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্ঘটনার পরপরই আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকলেও কিছুদিন পরই আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ কিন্তু ভুক্তভোগীরা বেঁচে থাকেন তাদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে৷ যেমন আহত হয়ে কাজ না করতে পারা কিংবা মা-বাবা হারিয়ে বাচ্চাদের দুঃখ দুর্দশা চলতে থাকে৷

প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যয়সংকোচ

অন্যদিকে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য হিসাব নিকাশ করে চলতে হয়৷ আর তাই ব্যয়সংকোচের ভারটা সর্বাপেক্ষা দুর্বলের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে দরিদ্র দেশের সস্তা মজুরির শ্রমিকদের ওপর৷ সমালোচনা করে সাউথউইন্ডের প্রতিনিধি বলছিলেন, ‘‘ওই সব দেশে শ্রমিকদের কাজের চুক্তি না থাকা, অত্যন্ত কম মজুরি পাওয়া কিংবা তাদের ওপর বাধ্যতামূলকভাবে অতিরিক্ত কাজ চাপানো ইত্যাদি দুরবস্থা পোশাক ব্যবসায় কঠিন প্রতিযোগিতার ফলাফল৷''

সাউথউইন্ড ছাড়াও অন্যান্য আরো কিছু সংস্থা উন্নয়নশীল দেশের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে এপর্যন্ত অতি অল্পই সাফল্য পাওয়া গেছে৷ এর প্রধান কারণ, এই সব সমঝোতাচুক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত৷ তাই রপ্তানিকারীরা তাদের অঙ্গীকার ভাঙতেও পারেন৷

আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে

বিদেশে উত্পাদনকারীদের কারখানায় গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার আইনগত কোনো দিকনির্দেশনা জার্মান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলির নেই৷ এই ধরনের একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব জার্মান সরকার কর্তৃক নাকচ করা হয়৷ ফ্যারেনশিল্ড জানান, ‘‘অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন গত বছর আভাস দিয়েছে, বিষয়টি শুধুমাত্র উত্পাদনকারীদের সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে না৷ জোর দেওয়া হবে স্বচ্ছতার ওপর, যাতে থাকবে বাধ্যবাধকতা৷''

অর্থাৎ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে জানাতে হবে, কোন পরিবেশে তারা তাদের পণ্য প্রস্তুত করছে৷ এর পরে ক্রেতারাই ঠিক করবেন, তারা পণ্যটি কিনবেন নাকি শেলফেই রেখে দেবেন৷

একটি সাধু উদ্যোগ

জার্মান খুচরা ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক বাণিজ্য অ্যাসোসিয়েশন, এভিই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্টেফান ভেঙলারনিরাপত্তা ক্ষেত্রে উত্পাদনকারীদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দায়বদ্ধতার প্রশংসা করেন৷ ডয়চে ভেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘‘নয় বছর ধরে ‘বিজনেস স্যোশাল কমপ্লায়েন্স ইনিশিয়েটিভ' নামে একটি উদ্যোগ রয়েছে৷ এটি উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে নিরাপত্তা ও মজুরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার দাবি জানিয়ে আসছে৷ ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে৷''

ভেঙলার প্রতিষ্ঠানের মালিক, ম্যানেজার ও শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন৷ এটা সম্ভব হতে পারে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে৷ যাতে তারা নিরাপত্তার গুরুত্বটা বুঝতে পারেন৷

সাউথউইন্ড-এর সাবিনে ফ্যারেনশিল্ড অবশ্য এতটা আশাবাদী নন৷ কিছু কিছু উন্নতি দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে একটা দুরবস্থা বিরাজ করছে কারখানাগুলিতে৷ এক্ষেত্রে জার্মান ব্যবসায়ীদের দায়বদ্ধতার ওপর জোর দেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখানে যে সব পণ্য বিক্রি হয়, তার বেশিরভাগই কিন্তু জার্মানিতে উত্পাদিত হয় না৷ এসব তৈরি হয় এমন সব দেশে, যেখানে শ্রমিকের অধিকার শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ৷ আর তার মুনাফাভোগী হলেন জার্মান ব্যবসায়ীরা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য