সম্রাটের অসুস্থতা নিয়ে দুদকের সন্দেহ
১২ মে ২০২২যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের জামিনে মুক্তির মধ্য দিয়ে আরো অনেকের মধ্যেই এখন জামিনের আশা জাগছে৷ যদিও এর আগে আরো তিনজন জামিন পেয়েছেন৷
সম্রাটকে কয়েকটি শর্তে শারীরিক দিক বিবেচনা করে চারটি মামলায়ই জামিন দেয়ার পর বুধবার তিনি মুক্তি পান৷ তিনি এখনো বিএসএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন৷ বৃহস্পতিবার বিএসএমইউ কর্তৃপক্ষ এই পর্যায়ের একজন যুবলীগের বহিস্কৃত নেতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নজিরবিহীন সংবাদ সম্মেলন করেছে৷ তবে দুদক তার এই অসুস্থতা নিয়ে সন্দেহ করছে৷ তারা জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবে আদালতে৷
ক্যাসিনো মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি
তদন্তকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনোর ঘটনায় র্যাব, পুলিশ, সিআইডি ও দুদক মিলিয়ে তখন ৫৫টি মামলা করে৷ এরমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ৩৫টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে৷ এই সব মামলায় সম্রাট ছাড়া আরো তিনজন জামিন পান৷ তারা হলেন: ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুইঁয়া এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ৷
তার মধ্যে অস্ত্র, মাদক, মানিলন্ডারিং ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩২ টি মামলা করে র্যাব, ডিবি ও সিআইডি৷ আর ১৩টি মামলা করেছে দুদক৷ ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলে ক্লাবপাড়ায় অভিযানের মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়৷
ওই অভিযানে যারা আটক হয়েছিলেন তাদেরমধ্যে আলোচিতরা হলেন: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত ( গ্রেপ্তারের পর) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, তার সহযোগী আরমান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী ঠিকাদার যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, বিসিবির ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর সেলিম প্রধান, দুই সহোদর ও যুবলীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও রূপন ভূঁইয়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিল ময়নুল হক মনজু৷
একই সময়ে ওয়েস্টিন হোটেল কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী৷
পাপিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থপাচারের মামলা হয়েছে৷ তবে ওই ঘটনাকে ক্যাসিনো কাণ্ডের বাইরে ধরা হয়৷ অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত ২০২০ সালের অক্টোবরে৷
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর মধ্যে দুই সহোদর এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও রূপন ভূঁইয়ার একটি মামলায় শাস্তি হয়েছে৷ তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড এবং চার কোটি টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন আদালত৷
যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে তার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে৷ তারা ওই অর্থ ক্যাসিনো, মাদক, টেন্ডারবাজি ও অস্ত্রসহ নানা অবৈধ কাজের মাধ্য আয় করে বড় একটি অংশ দেশের বাইরে পাচার করেছেন৷ তদন্তকারীরা বলছেন করোনার কারণে তাদের মামলার তদন্তে দেরি হয়েছে৷ বাকি ২০টি মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে আছে৷ অনেক মামলাই এখন বিচারাধীন৷ তবে বিচার দ্রুত শেষ হওয়া না হওয়া আদালতের বিষয়৷
সম্রাট কাহিনি
জামিনে মুক্তি পাওয়া যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে তদন্তে ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তিনি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় এই অর্থ পাচার করেছেন৷ তাকে ক্লাব পাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও টেন্ডারবাজিতে যারা আটক হয়েছেন তারা কোনো না কোনোভাবে সম্রাটের সাথে যুক্ত৷ তদন্তে দেখা গেছে সম্রাট ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরেই গিয়েছেন ৩৫ বার৷
তিনি কারাগারে আটক ৩১ মসের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালে থাকার সুযোগ পেয়েছেন৷ আর আদালত তাকে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ওই স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করেই জামিন দিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার নজিরবিহীনভাবে তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএসএমইউর পরিচালকসহ চিকিৎসকরা৷ সেখানে বলা হয়, সম্রাটকে দেখতে সুস্থ ও ফিট মনে হলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রচণ্ড অসুস্থ৷
এদিকে তার জামিনে মুক্তিতে তার অনুসারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন তারা৷ এমনকি তারা হাসপাতালেও ভিড় করছেন৷
জামিন বাতিলের আবেদন করবে দুদক
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম বলেন, ‘‘সম্রাটকে যে মেডিকেল গ্রাউন্ডে আদালত জামিন দিয়েছেন তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে৷ আমরা এই জামিন বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে যাব৷ চিকিৎসার জন্য তার জামিনের কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ তিনি অসুস্থ হয়ে থাকলে জামিন কেন? বিএসএমএমইউতেই চিকিৎসা হতে পারত৷ তিনি তো সেখানেই ছিলেন৷ চিকিৎসার নামে এই জামিন গ্রহণযোগ্য নয়৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে মামলা আছে তার বেশিরভাগেরই চার্জশিট হয়েছে, বাকিগুলোর তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে৷’’
কেন বিচারে জট?
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘‘করোনার কারণে চার্জশিট দেয়ায় দেরি হয়েছে সেকারণেই বিচারকাজও দেরিতে শুরু হয়েছে৷ তবে যেসব মামলায় চার্জশিট হয়েছে তার অধিকাংশেরই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, ট্রায়ালে আছে৷ আর মামলার বিচার স্বাভাবিক গতিতে অন্যান্য মামলার মতই চলছে৷ এর জন্য আলাদা কোনো ট্রাইবুন্যাল হয়নি৷ এছাড়া সাক্ষীরা ঠিকমত হাজির না হওয়ার কারণেও বিচার দেরি হচ্ছে৷ আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত বিচার শেষ করতে৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সম্রাটসহ আসামিরা জামিন পাওয়ায় কোনো সমস্যা দেখছি না৷ তারা জামিন পেয়ে পলাতক হলে সমস্যা৷ তখন আদালত আবার গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করবে৷ হাজির না হলে অনুপস্থিতিতে বিচার হবে৷’’
তিনি দাবি করেন, এইসব মামলা নিয়ে তার ওপর কোনো চাপ নেই৷ প্রসঙ্গতঃ ক্যাসিনো মামলার আসামিরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা৷