সম্মিলিতভাবে গ্যাস কিনবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
২১ অক্টোবর ২০২২প্রথমে আর্থিক সংকট, করোনা মহামারি এবং বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ – প্রতিটি বড় সংকটের মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো নিবিড় সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেবার পথে এগিয়েছে৷ জাতীয় স্তরে ‘একলা চলো রে’ নীতির বদলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে যে আখেরে সবার লাভ হয়, তা বার বার স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ ফলে একের পর এক বিষয়ে সিদ্ধান্তের এক্তিয়ারও ইইউ-র হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মুখেও ইউরোপের ২৭ সদস্যের এই রাষ্ট্রজোট আবার সেই পথই বেছে নিচ্ছে৷
প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন৷ ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা ও তর্কবিতর্কের পর তাঁরা গ্যাসের বাজারে সংশোধনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এক সাংবাদিক সম্মেলনে সেই খবর দিয়ে বলেন, এবার সদস্য দেশগুলির জ্বালানি মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলে কমিশন সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া প্রস্তুত করবে৷
এই পদক্ষেপের পাশাপাশি ইইউ আরও একটি জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক গ্যাসের বাজারে সদস্য দেশগুলির পক্ষে এককভাবে দরকষাকষি করে সুবিধাজনক মূল্য স্থির করা কঠিন হয়ে উঠছে৷ ফলে এবার যৌথভাবে গ্যাস কেনার পথে এগোবে ইইউ৷ তবে সেই লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ধার্য গ্যাসের ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি খতিয়ে দেখা হবে৷ কারণ ইইউ নেতাদের মতে, সুলভ মূল্যে গ্যাস কিনতে পারলেও অবশ্যই ধাপে ধাপে জ্বালানির ব্যবহার কমানোই মূল লক্ষ্য৷ সেইসঙ্গে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার ক্ষেত্রে মূল্যের নতুন কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইইউ নেতারা৷ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, সম্মিলিতভাবে গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত সহজে কার্যকর করা গেলেও গ্যাসের দাম যাতে ঊর্দ্ধসীমা না ছোঁয়, সেটা নিশ্চিত করা কঠিন হবে৷
প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে তর্কবিতর্কের পর এমন ঐকমত্যের ফলে ইইউ নেতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, বর্তমান জ্বালানি সংকট সম্পর্কে যাবতীয় মতভেদ দূর করে শীর্ষ নেতারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন৷ উল্লেখ্য, গ্যাসের মূল্য কমলে সরবরাহে ঘাটতি ও গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির আশঙ্কা করছিল জার্মানি৷ বাকিদের চাপে শলৎস সেই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন৷ তবে তিনি গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন৷ স্পেন ও পর্তুগালের সরকার ঠিক সেই পদক্ষেপই নিয়েছে৷ ইইউ জ্বালানি মন্ত্রীরা বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ শলৎস বলেন, প্রয়োজনে ইইউ নেতারা আবার মিলিত হতে পারেন৷ শলৎস তাঁর বিরোধিতা প্রত্যাহার করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ কিন্তু জার্মানির আপত্তির কারণে বাজারে গ্যাসের মূল্যের ঊর্দ্ধসীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব হয় নি৷ তাছাড়া জার্মানি জ্বালানি সংকটের মোকাবিলা করতে যেভাবে জাতীয় স্তরে ২০,০০০ কোটি ইউরো ধার্য করেছে, অনেক সদস্য দেশ তার সমালোচনা করছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)