সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী যাঁরা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২নোবেল কে পাবেন সেটা বলাটা বেশ কঠিন এক কাজ৷ আর সেই কাজটাই ১৯৮৯ সাল থেকে করে আসছে থমসন রয়টার্স৷ তারা প্রতি বছর নোবেল কমিটি কর্তৃক বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করার আগেই সম্ভাব্যদের একটা তালিকা প্রকাশ করে থাকে৷ এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, শুধু ১৯৯৩ আর ১৯৯৬ সাল বাদ দিয়ে অন্যান্য বছরগুলোতে রয়টার্সের তালিকা থেকে অন্তত একজন নোবেল পেয়েছেন৷ আরও একটা তথ্য এক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে যা এই তালিকার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে৷ সেটা হচ্ছে, থমসন রয়টার্সের হয়ে ডেভিড পেন্ডেলবুরি গত ১০ বছরে সম্ভাব্য নোবেল জয়ীর যে তালিকা করেছিলেন, তার থেকে মোট ২৬ জন নোবেল পেয়েছেন৷ ফলে পেন্ডেলবুরি এ বিষয়ে একটা পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন বলা যায়৷
তাঁর হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এবার সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীর তালিকায় রয়েছে ‘কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন' এর আবিষ্কারকদের নাম৷ এঁরা হলেন, আইবিএম'এর গবেষক চার্লস বেনেট, মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গিলস ব্রাসার্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজের উইলিয়াম উট্টারস৷
এই তিনজন ১৯৯৩ সালে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন নিয়ে কাজ করেছিলেন৷ সেসময় বিষয়টা পদার্থবিদদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল৷ ফলে ঐ বছরে প্রায় ৫,৩০০ বার এই তত্ত্বের কথা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল৷ যেটা ঐ বছরে প্রকাশিত অন্যান্য গবেষণা তত্ত্বের চেয়ে প্রায় তিনশো গুণ বেশি৷ শুধু ১৯৯৩ সালেই নয় পরবর্তীতেও বিষয়টা নিয়ে কাজ করেছেন অনেক বিজ্ঞানী৷
কিন্তু কী এই কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন? আইনস্টাইন বিষয়টাকে ‘ভুতুড়ে' নামে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ বিষয়টা হচ্ছে, কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই কোয়ান্টাম তথ্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া৷ অনেকটা বেতার তরঙ্গের মতো৷
তত্ত্বটা বাস্তবে রূপ দেয়া গেলে সুপার-ফাস্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি সম্ভব হবে৷ এছাড়া কোয়ান্টাম ইন্টারনেটও আসতে পারে ভবিষ্যতে৷ যেটা বর্তমানের চেয়ে অনেক উন্নত হবে৷
পেন্ডেলবুরির তালিকায় আরও আছে ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী লাই ক্যানহামের আবিষ্কার৷ রয়েছে আলোর গতি কমিয়ে দেয়া সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধের লেখক স্টিফেন হ্যারিস ও লেনে হাউ৷
বহুল আলোচিত হিগস বোসন কণার আবিষ্কারক পিটার হিগস এবার নোবেল পেতে পারেন বলে স্টিফেন হকিং মোটামুটি নিশ্চিত হলেও পেন্ডেলবুরি নন৷ তাঁর যুক্তি, নোবেলের প্রচলনকারী আলফ্রেড নোবেল সর্বোচ্চ তিনজনের মধ্যে পুরস্কার ভাগাভাগির পক্ষে ছিলেন৷ কিন্তু পিটার হিগস যখন হিগস বোসন কণার কথা বলেছিলেন, ঠিক সে সময়েই অন্তত আরও পাঁচজন একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান পেন্ডেলবুরি৷
এছাড়া কোনো একটা কিছু আবিষ্কারের প্রায় ২৫ বছর পর সাধারণত নোবেল দেয়া হয়৷ সে হিসেবেও পিটার হিগসকে আরেকটু অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে মনে করে পেন্ডেলবুরি৷ তবে তিনি এও বলেছেন, ‘‘আমার ভুলও হতে পারে''৷
‘এপিজেনেটিক' বিষয়ে আশির দশকে কাজ করা মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড অ্যালিস ও মাইকেল গ্রুনস্টাইন এবার চিকিৎসায় নোবেল পেতে পারেন৷ পেন্ডেলবুরি বলছেন, তাঁদের আবিষ্কার চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে৷ এবং এ কারণে অনেক জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে৷
রসায়নের ক্ষেত্রে পেন্ডেলবুরির পছন্দ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিরা ফুজিশিমাকে৷ তিনি এককালে শুধুমাত্র পেইন্ট'এ ব্যবহার করা টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইডকে অন্য কাজে লাগানোর উপায় বের করেছেন৷ পানি থেকে হাইড্রোজেন তৈরিতে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এছাড়া পরিবেশ দূষণ এড়াতে জাপানে রাস্তাঘাট তৈরির পাথরে প্রলেপ হিসেবে এই রাসায়নিক উপাদানটি ব্যবহৃত হচ্ছে৷
পদার্থ, রসায়ন, আর চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও নোবেলজয়ী সম্ভাব্য অর্থনীতিবিদদেরও তালিকা করে থাকে থমসন রয়টার্স৷ বিস্তারিত পেতে যেতে হবে এই ওয়েবসাইটে http://sciencewatch.com/nobel
অন্যান্য বছরের মতো এবারও এই তালিকা থেকে কেউ নোবেল পান কিনা - তা জানতে, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আর ক'টা দিন৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স)