পিলখানা হত্যা মামলায় ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল
২৭ নভেম্বর ২০১৭নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে আটজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দিয়েছে আদালত৷ এখন আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলে সাজা কার্যকর করা যাবে৷
মৃত্যুদণ্ড ছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে৷ এছাড়া ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং খালাস পেয়েছেন ৪৯ জন৷ সোমবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেয়৷ বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার৷ আদালত এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে রায়ে বিভিন্ন সুপারিশও করা হয়েছে৷ এই মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে৷ মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান৷ আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা৷
এর আগে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেয় বিচারিক আদালত৷ এদের একজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬ জনকে৷ সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন৷ আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন আসামি৷ অর্থাৎ সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের৷ হাইকোর্টে কোনো রায় পড়তে দু'দিন সময় লাগার বিয়ষটি অনেক আইনজীবীই নজিরবিহীন বলেছেন৷ এ মামলায় আদালত এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে৷ সম্পূর্ণ রায় প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার৷ আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে৷ গণতন্ত্র ধ্বংস করাই ছিল বিদ্রোহের উদ্দেশ্য৷
হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত বড় একটা মামলা সেটা শুনানি করে শেষ করতে তো একটু সময় লাগবেই৷ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সবার কথাই আদালতকে শুনতে হয়৷ ফলে একটু বেশি সময় লেগেছে৷ যে কোনো মামলার বিচার শেষ করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷’’
রায় পড়তে গিয়ে বিচারপতি নজরুল বলেন, তৎকালীন বিডিআর-এর নিজস্ব গোয়েন্দারা কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা আগে জানতে পারেনি, সেই ব্যর্থতা খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি করা দরকার৷ তিনি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, কোনো সমস্যা এলে তা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হবে৷ বিজিবির জওয়ানরা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে তা মীমাংসা করতে হবে এবং বিজিবিতে সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের মধ্যে পেশাদারি সম্পর্ক থাকতে হবে৷ নজরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, কেন সে সময়ের বিডিআর ডাল-ভাত কর্মসূচি নিল? ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি যেন না নেওয়া হয়, সে ব্যাপারেও বিজিবিকে সতর্ক করেন এই বিচারপতি৷
আরেক বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, কোনো সেনা কর্মকর্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে থাকবে না, এটাই ছিল বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মূল মনোভাব৷ তাই তিনি জওয়ানদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক (কলোনিয়াল) আমলের মতো ব্যবহার না করার কথা বলেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘একই দেশ৷ এখানে সবাই ভাই ভাই৷’’ আদালত পর্যবেক্ষণে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করেছেন৷ আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে৷ সীমান্তরায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে৷ কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর-এর কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন৷ এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে৷ একইসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই৷ সে কারণেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷