জার্মানির ‘নাৎসি ওঝা'!
২৭ জানুয়ারি ২০১৭বুর্গহার্ডের লম্বা দাড়ি, আলখাল্লা, হাতের লাঠি আর সাজগোজ সত্যিই জাদুকর মার্লিনের কথা মনে পড়িয়ে দেয়৷ বুর্গহার্ড নিজেকে বলেন ‘ড্রুইড', অর্থাৎ প্রাচীন গল, আইরিশ ও কেল্ট-দের সেই সব পুরোহিত, যাদের নানা ধরনের যাদুকরি ক্ষমতা ছিল, বলে লোকে ধরে নিতো৷
জার্মানিতে প্রাক-খ্রিষ্টীয় প্রথা-প্রকরণ, আচার-আচরণ সম্পর্কে আগ্রহ, এমনকি উৎসাহ নতুন কিছু নয়৷ কাজেই নব্য ড্রুইডিজমে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ নতুন হলো এই ‘পাগান' বা অখ্রিষ্টীয়, আধিভৌতিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে নব্য নাৎসিবাদের যোগ৷
তাঁর নিজের ড্রুইড নাম হলো বুর্গোস ফন বুকোনিয়া, বলেন বুর্গহার্ড৷ গত বুধবার পুলিশ জার্মানি জুড়ে মোট ১২টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে যে সাতজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে এই বুর্গোস ফন বুকোনিয়াও ছিলেন৷ ধৃত ব্যক্তিরা পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং ইহুদিদের উপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল, বলে দৃশ্যত পুলিশের কাছে খবর ছিল৷ তল্লাসিতে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিবারুদ পাওয়া গিয়েছে, বলে বিভিন্ন মিডিয়া জানিয়েছে৷
ড্রুইডের ফেসবুক পেজ
নব্য ড্রুইডবাদ একটি অখ্রিষ্টীয় আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী যারা প্রকৃতির উপাসনা করে ও যাবতীয় প্রাণীকে শ্রদ্ধা করে, বলে শোনা যায়৷ বুর্গহার্ডের ফেসবুক পেজ দেখলে কিন্তু তা মনে হবে না৷ তিনি যে ইহুদি, মুসলিম, উদ্বাস্তু ও ‘‘নোংরা বামপন্থি, যাদের মগজ কাজ করে না'', এমন সব মানুষদের পছন্দ করেন না, তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়৷
‘‘কবে সব নাগরিকরা বুঝতে পারবেন, যে ইইউ-এর পতাকায় ইসরায়েলের ১২টি তারার অর্থ তাদের (ইইউ নাগরিকদের) ধ্বংস?'' বুর্গহার্ড এই পোস্টটি করেছেন ২০১৫ সালের ১০ই আগস্ট তারিখে৷ এক বছর পরের একটি পোস্টে বলা হয়েছে: ‘‘ইহুদি-বিদ্বেষী হলো সে, যে তার চিন্তাকে নিষিদ্ধ হতে দিতে চায় না''৷
শুধু ফেসবুক নয়, রুশ সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ভিকে-তে বুর্গহার্ডের বিভিন্ন ঘোষণা থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তথাকথিত ‘‘রাইখসবুর্গার'' বা হিটলারের তৃতীয় রাইখ বা সাম্রাজ্যের ‘নাগরিকদের' মতোই বর্তমান জার্মান রাষ্ট্রের কর্তৃত্বে বিশ্বাস করেন না৷
জাদুকর থেকে নাৎসি ড্রুইড
গোড়া থেকেই চরম দক্ষিণপন্থি মতাদর্শের অনুগামী ছিলেন না বু্র্গহার্ড৷ ২০০৮ সালে বাভেরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে তাঁকে বলতে শোনা গেছে যে, তাঁর জন্ম ২,৫০০ বছর আগের এক ‘‘অতীব ঠান্ডা শীতের রাত্রে''৷ তাঁর মা নাকি বুর্গহার্ডকে জন্ম দেবার সময়েই প্রাণত্যাগ করেন, তাই বুর্গহার্ডের মামা মার্লিন – অর্থাৎ রাজা আর্থারের জাদুকর মার্লিন বুর্গহার্ডকে মানুষ করেছেন৷
২০১২ সালে বুর্গহার্ডকে একটি ‘‘প্রস্তরবৃত্ত সমিতি'' থেকে বহিষ্কার করা হয়: জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ব্র্যুল শহরের এই সংঘটির সভাপতি চিলেন বুর্গহার্ড৷ কিন্তু তিনি একটি মসজিদ পোড়ানোর ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করায়, এবং ইউরোপে যে ‘‘তিনটি প্রধান ধর্মমতের'' স্থান আছে, তা অস্বীকার করার দরুণ বুর্গহার্ডকে সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ একটি প্রেস রিলিজে প্রদত্ত উদ্ধৃতি অনুযায়ী বুর্গহার্ড সে-সময় বলেছিলেন যে, ‘‘মরুভূমির ধর্মমতগুলির মরুভূমিতেই থাকা উচিত''৷ ২০১৩ সালে বুর্গহার্ড ফ্রাংকফুর্টে ‘‘ব্লকুপাই'' আন্দোলনকারীদের ছবি তুলে পরে তা ফেসবুকে পোস্ট করেন৷ ২০১৫ সালে তিনি ফ্রাংকফুর্টে পেগিডা আন্দোলনের একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন৷
বুর্গহার্ড বি.-র দৃষ্টান্ত আরো একটি প্রমাণ যে, জার্মানিতে সহিংসতাপ্রবণ চরম দক্ষিণপন্থি বলতেই যে শুধু কিছু স্কিনহেড আর নিও-নাৎসিকে বোঝাবে, তার কোনো মানে নেই৷ জার্মানিতে চরম দক্ষিণপন্থি মনোভাব আরো অনেক বিস্তৃত এবং বহু মানুষের মনে গভীরভাবে গাঁথা – যেমন আমাদেউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মারিয়ুস হেলভিগ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন৷ নব্য নাৎসিদের বহিরাগত বিদ্বেষের শিকার এক আফ্রিকান তরুণের নামে সৃষ্ট এই নিধি জার্মানিতে চরম দক্ষিণপন্থি কার্যকলাপের উপর নজর রাখে৷
বেন নাইট/এসি
জার্মানির ‘নাৎসি ওঝা'-র এ গল্প আপনাদের কেমন লাগলো? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷