সত্য মিথ্যার সাংবাদিকতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০কিন্তু কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্য়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা আলাদা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে৷ এর পেছনে সাংবাদিকদের দায় সবচেয়ে বেশি বলে মনে করি৷
প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে কতো কতো সংবাদ আসে৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে জরুরি আর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো ফেসবুকে পেয়ে যেতাম শেয়ার-কমেন্টের কারণে৷ কিন্তু ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, এখন ফেসবুক স্ট্যাটাস বা কমেন্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যম৷ সঠিক তথ্য দেওয়ার চেয়ে কিভাবে প্রকাশ করলে ক্লিক আর শেয়ার বাড়বে, সেদিকে সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি৷
গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়লে গণমাধ্যমের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার কথা৷ তা কি হচ্ছে?
বাংলাদেশের দিকে আসার আগে একটু বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে আসি৷
যুক্তরাজ্যে বরিস জনসনের সরকারের সঙ্গে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প সরকারের মিল খুঁজে পান৷ এবার সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণেও জনসন বেছে নিয়েছেন মডেল ট্রাম্প৷ ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয়) ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিফিং এ শুধু বাছাই করা পলিটিক্যাল সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়ার কথা বলা হয়৷ প্রতিবাদে সব সাংবাদিক সেখান থেকে ওয়াকআউট করেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজে প্রতিবছর সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রেসিডেনশিয়াল ডিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ এবারের নৈশভোজে গত ২০ বছর ধরে অংশ নেয়া সিএনএনের ওল্ফ ব্লিৎসারকে দাওয়াত দেয়া হয়নি৷ কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন সিএনএন ‘ফেক নিউজ'৷
সংবাদমাধ্যমকে বরাবরই শাসকগোষ্ঠী প্রতিপক্ষ বলে মনে করে এসেছে৷ এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে৷ যেকোনো বিচ্যুতি, অন্যায়ের খবর তো সাংবাদিকরাই খুঁজে বের করেন, প্রকাশ করেন৷ কিন্তু গোপনে সাংবাদিকদের কোনঠাসা করার চেষ্টা বরাবর থাকলেও এমন সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা বিশ্বজুড়ে এর আগে দেখা যায়নি৷
বাংলাদেশেও শোনা যায় বিশেষ বিশেষ সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম ব্ল্যাক লিস্টে আছেন, গণভবনে দাওয়াত পান না৷ সাংবাদিকদের ওপর হামলা তো নিত্যদিনের ঘটনায় দাঁড়িয়েছে৷
সংবাদমাধ্যম প্রতিযোগিতা করে, সাংবাদিকেরা সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিপক্ষ হতে পারেন৷ কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা যখন রুদ্ধ হয়, তখন একপক্ষ আহত হলে অন্যপক্ষ হাততালি কি দিতে পারেন? এর ফলে যে একসময় তাদের ওপরও খড়গ নেমে আসার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া হয়, সেটা কি তারা মনে রাখেন না?
যুক্তরাষ্ট্রে ফক্স নিউজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে সোচ্চার, এটা কোনো গোপন কথা নয়, বরং ফক্সের সাংবাদিকরা বলতে গেলে ঘোষণা দিয়েই এমন পক্ষ অবলম্বন করেন৷ অন্য সংবাদমাধ্যমে তাদের নিয়েও হাসিঠাট্টা হয়৷ কিন্তু সিএনএনকে নিষিদ্ধ করে দিলে ট্রাম্প পরবর্তী যুগে ফক্সেরও যে নিষিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা বাড়ে, সেটা বুঝতে কি খুব বেশি সাধারণ জ্ঞান প্রয়োজন?
রাজনৈতিক চাপ, পক্ষপাতিত্ব বা সেল্ফ সেনসরের কারণে সংবাদমাধ্যম এখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে৷ সংবাদ প্রকাশ হলে এখন পাঠক সেটার নীচে কমেন্টে ‘দালাল' লিখে আসেন৷ বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের এতো বেশি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, কোনো সংবাদ এখন আর তারা বিশ্বাস করতে চান না, বরং নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী অনলাইন ঘেঁটে সংবাদ খুঁজে নেন৷ ভুঁইফোড় সংবাদমাধ্যম সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে সংবাদ জগতে৷
মিথ্য়া বায়ুবাহিত ভাইরাসের মতো, না চাহিলেও তারে পাওয়া যায়৷ বিশেষত ফেসবুক যখন গণমাধ্যমের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে তখন শুধু সাংবাদিক নয়, যেকোনো শুভবুদ্ধির মানুষেরই শঙ্কিত হওয়ারই কথা৷