‘সকল রাষ্ট্রীয় খুন বন্ধ কর’
২২ মে ২০১৮বিষয়টি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশজুড়ে৷ বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে অনেকেই এ নিয়ে কথা বলছেন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সের উদাহরণ টেনে কেউ কেউ একে সমর্থন করলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন৷ সমর্থনকারীদের মতে, মাদক নির্মূলে অন্য কোনো উপায় নেই৷ আর বিরোধীদের মতে, হত্যা কোনো সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে না৷ এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দেশের আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ৷
সেইসঙ্গে ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা না করে, বড় বড় যারা রাঘব বোয়াল, তাদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান তাঁরা৷
সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম লিখেছেন, ‘‘মাদক প্রথমে একটি ব্যাক্তি, এরপর একটি পরিবার, অতঃপর একটি সমাজকে তছনছ করে দেয়৷ ওদেরকে প্রতিরোধ করুন৷’’
মৌলভিবাজারের কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ কুলাউড়ায় মাদক বিরোধী অভিযানের আপডেট দিচ্ছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে কুলাউড়া থানায় আরও একজন মাদক ব্যবসায়ী আটক৷ সার্কেলে ১২ এবং কুলাউড়া থানায় ৭৷’’
তরুণ সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন লিখেছেন, ‘‘কোন প্রক্রিয়ায় করবে সেটা রাষ্ট্র ভালো জানে৷ তবে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের সমূলে ধ্বংস করা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরো জোরালো হোক৷’’
এদিকে, সাংবাদিক কামাল আহমেদ লিখেছেন, ‘‘এ কেমন নৈতিকতা আমাদের যে, আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামে যে রাষ্ট্রীয় অপরাধের নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধের জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাবো, সেই অন্যায় কৌশলকেই আমরা অনুশীলন করব? এই দ্বিচারিতা বন্ধ হোক৷ মাদক কারবারিদের খুঁজে বের করে আটক করুন, বিচার করুন, শাস্তি দিন; কিন্তু সন্দেহের বশে হত্যা কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি হতে পারে না৷’’
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের ভাষায়, ‘‘যুদ্ধ ছাড়াই প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু কি সমাধান দিতে পারবে? সেই কবে বিএনপি ক্লিনহার্ট অপারেশন শুরু করেছিল দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে৷ পেরেছিলো? পারেনি৷ সাময়িক স্বস্তিপ্রকল্প কখনো স্থায়ী হয় না৷ তাই এখনো চলছে সন্ত্রাস, জঙ্গী আর মাদকের বিরুদ্ধে সাময়িক স্বস্তি প্রকল্প৷ এটা ঠিক, এসব প্রকল্প জনপ্রিয় হয়৷ কিন্তু স্থায়ী হয় না৷ তাই যদি হতো, তাহলে ক্রস ফায়ারের প্রবক্তা হিসাবে বিএনপি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতো৷ তাই ব্যর্থ প্রকল্প অনুসরণ না করাই উত্তম৷’’
তাঁর স্ট্যাটাসের দু'টি মন্তব্য গুরুত্ব বিবেচনায় তুলে ধরা হলো৷ সেখানে হাবিব রহশন লিখেছেন, ‘‘আমার বাসা বসুন্ধরা বি ব্লকে ৮নং রোডে৷ IUB, North South University র কাছে৷ ৮ নং রোড নেশাখোরদের পট্টি নামে পরিচিত৷ বাসার সামনে ছেলে-মেয়েরা যেভাবে নেশা করে, দেখতে অবাক লাগে৷ আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না৷ মনে হয়, বসুন্ধরার মালিক এদের সহযোগিতা করে৷ এরা এত শক্তিশালী, ক্রস ফায়ার ছাড়া কোনো পথ নেই৷ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই৷’’
আর মোহাম্মদ আলী মারজান লিখেছেন, ‘‘এদের বিচারের আওতায় এবং কারাগারের সীমানায় রাখতে না পারা রাষ্ট্রের ব্যার্থতা ! আর রাষ্ট গলা কেটে সে ব্যার্থতার দায়মুক্তির চোখ সাফাই দেয় ! এ লজ্জা কার ? বিচার বিভাগের ? শাসন বিভাগের ? নাকি রাষ্ট্রের?’’
রেজাউল ইসলাম রনি নামের এক অভিযুক্তের কেস স্টাডি তুলে ধরেন বাকি বিল্লাহ ৷ তিনি লেখেন যে, কীভাবে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করেছে৷ পরে তাকে ঠিকই ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মাদক ব্যবসার সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডাররা রাষ্ট্রের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে, বন্দুকযুদ্ধের নেতৃত্বও তারাই দেয়৷ ইয়াবার মতো সর্বনাশা মাদক রোধ করতে চাইলে রাষ্ট্রকে নিজের মাথার দিকেই বন্দুক তাক করতে হবে সবার আগে- সে কি তা পারবে?’’
তরুণ সাংবাদিক এসএম ফয়েজ লিখেছেন, ‘‘র্যাবের এমন সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও রাজধানীর কাফরুল, কাওরান বাজার রেললাইন, তেজগাঁও রেললাইন, গুলিস্থান পার্ক, মিরপুর পল্লবী মোড় সংলগ্ন লাল মাঠ, ১১ নম্বরের বিহারি ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্প, জাতীয় নাট্য মঞ্চ, গাবতলী বালু মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন মাদক স্পটগুলোতে এখনও মাদক কেনাবেচা চলছেই প্রকাশ্যে৷ গোলাপি বড়ি বা বাবা বিক্রির কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা৷ আর গডফাদাররাতো বরাবরই নতুন জামাই আদরে...... হা হা হা....৷’’
ক্যানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলি সাগর লিখেছেন, ‘‘মাদক ব্যবসায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে পদক্ষেপ নিন৷ ছুটকোদের ক্রসফায়ারে দিয়ে রুই-কাতলাদের বাঁচিয়ে দেবেন না৷ এভাবে মাদক ব্যবসা বন্ধও হবে না৷’’
মোহাম্মদ শাহেদসরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘একটি জিনিস আমার মনে হলো বলা দরকার, বাংলাদেশ কোনো মাদক উৎপাদনকারী দেশও না, আর মাদক তৈরিও করে না৷ আমরা যেটুকু দেখেছি, বিশেষ করে ‘ইয়াবা’ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢোকে৷ এক্ষেত্রে পুলিশ RAB যেভাবে দেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালাচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় যারা কর্মরত রয়েছে তারাও যদি একটু কঠোর পদক্ষেপ নেন, তাহলে বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব৷’’
আহমেদ রাজীব লিখেছেন, ‘‘ফিলিপিন্সের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি৷ সেখানে ২ বছরে ২০ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে৷ অর্থাৎ দিনে প্রায় ২৭ জনের মতো মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হচ্ছে৷ যদি ফিলিপিন্সের সাথে তুলনা করা হয়, তবে সেই তুলনায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘণত্ব বিচারে দুই বছরে ৩০ হাজার মাদক-ব্যবসায়ী এবং দিনে ৪০ জনেরও অধিক মাদক-ব্যবসায়ী নিহত হতে পারে৷ কিন্তু বর্তমানে মাদক-ব্যবসায়ীর নিহতের সংখ্যা ফিলিপিন্সের গতিতে বাড়ছে না৷ গতি বাড়িয়ে অভিযান আরো ফলপ্রসূ হোক৷ আবার, সেইসাথে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাও ভীষণ জরুরি৷’’
সংকলন: যুবায়ের আহমেদ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...