1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংস্কৃতির বন্ধনে জ্যাজ সংগীত

২১ সেপ্টেম্বর ২০১২

ডেফনে সাহিন এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান সংগীত শিল্পী৷ জার্মানি ও তুরস্কের জ্যাজ সংগীত জগতে রয়েছে তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা৷ এই দুই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, শোনা যাক সে কথা৷

https://p.dw.com/p/16CBF
ছবি: Roxana Reiss

‘এসো আমরা পৃথিবীটাকে শিশুদের হাতে তুলে দেই৷' তুর্কি কবি নাজিম হিকমেতের এই কথাগুলি আমার মনে গভীর দাগ কেটেছিল, যা আজও মুছে যায়নি৷ ‘শিশুরা আমাদের হাত থেকে পৃথিবীকে বরণ করে নেবে, রোপণ করবে চিরজীবী বৃক্ষরাজি৷' এই কথাগুলো যেন ভেসে ওঠে ছবির মত৷ মনে প্রশ্ন জাগে, কে এই মানুষটি? বার্লিনে তাঁর নাম তো শুনিনি? আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানালেন ডেফনে সাহিন৷ যখন একটি তুর্কি কবিতায় সুর দেয়ার কথাটা মাথায় এল আমার, তখন শৈশবের সেই কবিতার লাইনগুলি আবার উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল৷

ডেফনে জানালেন, বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, তুর্কি ভাষার সঙ্গে আধুনিক জ্যাজ সংগীত কি সুন্দর খাপ খেয়ে যায়৷ নানা ধরনের সংগীত ও সংস্কৃতির জন্য দ্বার খোলা থাকে জ্যাজ সংগীতে৷ সংগীতের এই ধারাটি ক্রমেই বৈচিত্র্যময় হচ্ছে, হচ্ছে বিকশিত৷

শিল্পীর ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতিও প্রকাশ পায় এই সংগীতে৷ আর এই কারণেই আমি জ্যাজ সংগীতকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে মনে করি৷ এরপর আমি কবি নাজিম হিকমেতের আরো কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়েছি৷ একটি গানের অ্যালবাম ‘ইয়াসামাক' উৎসর্গ করেছি কবি হিকমেতের উদ্দেশে৷

Defne Sahin
তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান সংগীত শিল্পী ডেফনে সাহিনছবি: Anja Grabert

তুরস্কে জ্যাজ জগত

অ্যালবামটি শুধু জার্মানিতে নয় তুরস্কেও প্রকাশ করার ইচ্ছা জাগে আমার৷ তাই সিডিটি নিয়ে রওনা হই ইস্তানবুলের দিকে৷ ইস্তানবুলের জ্যাজ জগত বার্লিনের তুলনায় বেশ ছোট, তবে প্রাণবন্ততার দিক দিয়ে মোটেও কম নয়৷ বেশ কিছু জ্যাজ ক্লাব রয়েছে সেখানে৷ আন্তর্জাতিক শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বড় বড় জ্যাজ সংগীত উত্সব৷ এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু রেকর্ড কোম্পানি৷ অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছে, এক তুর্কি মেয়ে বার্লিনে জ্যাজ সংগীত গায়, তাও আবার নাজিম হিকমেতের কবিতায় সুর দিয়ে! কারণটা কী?

তুরস্কের তুলনায় জার্মানির রেকর্ড কোম্পানিগুলোর এ ক্ষেত্রে আগ্রহ কম৷ হয়তো বা অনেকের ধারণা, তুর্কি জ্যাজ জার্মানির শ্রোতাদের তেমন টানবে না৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সংগীত শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে, সংগীতে বিদেশি ভাষা কোনো বাধা নয়৷ বরং সংগীত অপরিচিতের প্রতি কৌতূহলী ও আকৃষ্ট করে, সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়৷

বার্লিন ও ইস্তানবুলে কাজের ক্ষেত্রেও বেশ পার্থক্য রয়েছে৷ ইস্তানবুলে সংগীত জগত বেশ খোলামেলা৷ কনসার্ট, সংবাদ সম্মেলন বা রেকর্ডিং-এর বিষয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ কোনো অফিস ঘরে বা জ্যাজক্লাবে বসেই আলাপ আলোচনা সেরে নেওয়া হয়৷ অন্যদিকে বার্লিনে সংগীতসংক্রান্ত আয়োজন, পরিকল্পনা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই করা হয়৷ ফলে মূল প্রকল্পটার ব্যাপারে ভালভাবে মন দেয়া যায়৷ নিজে উপস্থিত না থেকেও সংগীতের ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ানো যায়৷

তুর্কি সংস্কৃতির নৈকট্য

সংগীতের পাশাপাশি তুর্কি সংস্কৃতির কাছাকাছি আসতে পারাটাও আমার জন্য এক বড় পাওয়া৷ বাড়িতে মা বাবার কাছে তুর্কি সংস্কৃতির সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি আমি৷ কিন্তু জার্মানিতে বড় হয়েছি বলে বাইরের সামাজিক পরিবেশে এই অভাবটা ছিল সবসময় ৷

Teilnehmer 2011 Defne Sahin Group
ডেফনে সাহিন গ্রুপছবি: Jonathan Gröger

কবি হিকমেতের সংগীত ও লিরিক আমাকে ইস্তানবুলে নিয়ে গেছে৷ এক বছর ধরে আমি বার্লিন ও ইস্তানবুলে বসবাস করছি৷ যাতায়াত করছি এই দুই শহরে, গান গাইছি, সুর দিচ্ছি৷ ইস্তানবুলে আমি বড় মাপের সংগীত শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, যারা আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন৷ তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল, গ্যোটে ইন্সটিটিউটের সহায়তায় আমার গানের ব্যান্ড নিয়ে ইস্তানবুলে যাওয়াটা৷ ব্যান্ডের সহকর্মীরা দুই সংস্কৃতির মাঝে আমার জীবনটা কেমন, তার খানিকটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন৷ তাঁরা সেখানে শুধু আমার কনসার্টেই নয়, ইস্তানবুলের জ্যাজ শিল্পীদের গানের সঙ্গেও সংগত করেছেন৷

তবে বার্লিন ও ইস্তানবুলের এই সুন্দর ও মেলামেশায় পূর্ণ সময়টায় ইতি টানতে হবে এবার৷ কেননা আমি কিছুদিনের মধ্যে নিউইয়র্কে যাব কাজ করতে৷ সেখানকার সংগীত জগত সম্পর্কে আমি খুব আগ্রহী৷ এ ছাড়া সেখানকার পারিপার্শ্বিকতাও আমাকে আকৃষ্ট করে৷ সেখানে আভিবাসীদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না, বরং সমৃদ্ধি হিসাবে মনে করা হয়৷

আমার সংগীত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমার কাছে যতটা সহজ ও স্বাভাবিক বলে মনে হয়, ততটা কিন্তু আশেপাশের মানুষজনের কাছে মনে হয় না৷ যেমন জার্মানিতে তেমনি তুরস্কেও বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় বারবার৷

প্রতিবেদন: ডেফনে সাহিন/আরবি

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য