লকডাউন শিথিল করতে চাপের মুখে ইইউ নেতারা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১করোনা টিকা সংগ্রহ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট গতি আনতে পারছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ রাষ্ট্রজোট হিসেবে টিকা কোম্পানিগুলির সঙ্গে দরকষাকষি করে চুক্তির মাধ্যমে ন্যায্য দামে বিশাল সংখ্যক টিকা নিশ্চিত করেছিল ইইউ, অন্তত কাগজে-কলমে সে রকমই হবার কথা ছিল৷ সদস্য রাষ্ট্রগুলি সেই ক্ষমতা ও দায়িত্ব ব্রাসেলসের হাতেই ছেড়ে দিয়েছিল৷ কার্যক্ষেত্রে সরবরাহের অভাবসহ একাধিক জটিলতার কারণে ইউরোপের মানুষের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে৷ তার উপর ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা করোনার আরও ছোঁয়াচে সংস্করণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে৷ এই মিউট্যান্টের মোকাবিলা করতে টিকার তৃতীয় ডোজের প্রয়োজন হলে আরও টিকার অর্ডার দিতে হবে৷ এই অবস্থায় সংকট সামলাতে বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে বসছেন ইইউ শীর্ষ নেতারা৷
অতীতের ভুলত্রুটি সামলে করোনা সংকটের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেবার পরিকল্পনা করছেন ইইউ নেতারা৷ সরবরাহে ঘাটতি সত্ত্বেও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ইইউ সদস্য দেশগুলির কমপক্ষে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রায় এখনো অবিচল রয়েছে ইইউ৷ টিকা কর্মসূচি শুরু হবার দুই মাস পর ৪৫ কোটি জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ টিকার প্রথম ডোজ এবং দুই শতাংশ দুটি করে ডোজ পেয়েছেন৷
এরই মধ্যে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে তর্কবিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে৷ যারা টিকা পেয়ে গেছেন, তাদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে এমন দাবি উঠছে৷ কিন্তু সব টিকার ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঠেকানো যায় কিনা, তা এখনো স্পষ্ট না হওয়ায় এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে কিছু মহল৷ জার্মানি ও ফ্রান্স এখনই এমন পদক্ষেপের বিরোধী৷ তবে ইইউ স্তরে যাত্রীদের টিকা সংক্রান্ত তথ্য রাখার লক্ষ্যে অ্যাপের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা চলছে৷ গ্রিসের মতো পর্যটন-নির্ভর দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে পর্যটকদের আগমনের সুযোগ করে দিয়েছে৷
বৃহস্পতিবারের শীর্ষ বৈঠকে ইইউ নেতারা পারস্পরিক সমন্বয়ের অঙ্গীকার ছাড়া নতুন কী পদক্ষেপ নিতে পারেন, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে বছরের প্রথম তিন মাসে টিকা সরবরাহে বিপুল ঘাটতির পর পরিস্থিতির অনেক উন্নতির আশায় তারা দিন গুনছেন৷ জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা ইউরোপে অনুমোদিত হলে এবং সেই কোম্পানির সঙ্গে বোঝাপড়া হলে চাপ কিছুটা কমতে পারে৷ জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশ সামান্য পরিমাণ টিকা পেয়েও সেগুলি বণ্টন করতে হিমসিম খাচ্ছে৷ তাই এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যও চাপ বাড়ছে৷ এপ্রিল মাস থেকে টিকার সরবরাহ এক ধাক্কায় বেড়ে গেলে ইইউ দেশগুলি দক্ষতার সঙ্গে সেগুলি দ্রুত নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷
এই মুহূর্তে জনমতের চাপ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ইইউ নেতারা৷ মাসের পর মাস ধরে কারফিউ ও লকডাউনসহ একাধিক কড়া পদক্ষেপের ফলে অনেক মানুষ ধৈর্য্য হারাচ্ছেন৷ একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী রাজনৈতিক নেতাদের উপর মানুষের আস্থাও কমে চলেছে৷ অনেকেই স্পষ্ট ও দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ এই অবস্থায় ঝুঁকি সত্ত্বেও লকডাউন শিথিল করার জন্য চাপ বাড়ছে৷ প্রায় এক বছর ধরে কার্যত বন্দি থাকার পর আসন্ন বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে পর্যটনের প্রবল স্পৃহা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ইইউ নেতারা৷
এসবি/কেএম (এএফপি, এপি)