সংকটে এয়ার ইন্ডিয়া!
৪ জুন ২০১৮ভারতের আকাশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ‘এয়ার ইন্ডিয়া' এবং ‘ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স', এই দুটি সরকারি উড়ান সংস্থারই একছত্র আধিপত্য ছিল দীর্ঘদিন৷ সেসময় ওই দুই সংস্থার গর্বিত বিজ্ঞাপন ছিল— আমরা বিমান সফরের টিকিট বিক্রি করি না, লোকে আমাদের থেকে টিকিট কেনে! এবং এই একাধিপত্যের সুযোগ নিয়ে একদিকে বিমানযাত্রা চিরকালই মহার্ঘ এবং একমাত্র বিত্তবানের আয়াস-সাধ্য হয়ে থেকেছে৷ অন্যদিকে একচেটিয়া কারবার হওয়া, কোনও প্রতিযোগিতা না থাকার যা যা কুফল, সবই এই দুই উড়ান সংস্থার পরিষেবায় চোখে পড়েছে৷ দ্রুত পড়েছে পরিষেবার গুণমান৷
সরকারি কর্মচারীদের মার্কামারা ‘নিতে হলে নিন, না হয় বাদ দিন' হাবভাব প্রকট হয়ে উঠেছে কর্মীদের আচরণে৷ এর পাশাপাশি আরও বেতন, আরও সুযোগের দাবিতে প্রায়ই আন্দোলন, কর্মবিরতি৷ এমনকি ধর্মঘটও প্রায় নিয়মিত হয়ে ওঠে দুই সরকারি সংস্থায়৷ ফলে যেদিন থেকে বেসরকারি উড়ান সংস্থা ভারতের বাজারে পা রাখলো একের পর এক, বিমানসফরের খরচ দ্রুত কমলো, পরিষেবা আন্তর্জাতিক মানের হলো এবং সমস্ত ব্যাপারেই নিখুঁত পেশাদারিত্ব এলো, এয়ার ইন্ডিয়া আর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স দ্রুত নিজেদের ব্যবসা হারিয়ে জরাগ্রস্ত দুই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো৷ তাদের দুরবস্থা এখন এতটাই যে, সরকার দায়মুক্ত হতে পারলে বাঁচে!
কিন্তু খোলাবাজারে নিলাম ডেকে এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করা, বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা সদ্য সদ্য ব্যর্থ হলো৷ কোনও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না দেখে নিলামের দিন বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু তাতে বাজারে উৎসাহ বাড়লো না৷ শোনা গেল, শেষ পর্যন্ত কোনও ক্রেতাই এয়ার ইন্ডিয়ার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতির বোঝা নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাইছে না৷ এই আর্থিক দায়ের মধ্যে আছে বিরাট সংখ্যক কর্মীর বেতন এবং প্রাক্তন কর্মীদের অবসরকালীন ভাতা৷ এই দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি নয়৷ এ কারণে ভারতের একাধিক উড়ান সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে৷
কিন্তু এখন এ-ও জানা যাচ্ছে, এটা হয়তো সম্ভাব্য ক্রেতাদের সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর যোগসাজশ, যাতে সরকারি শর্তে নয়, খদ্দেরের শর্তেই এয়ার ইন্ডিয়ার হাতবদল হয়৷ যেমন, সরকার চাইছে ৭৬% মালিকানা ছেড়ে দিয়ে ২৪% নিজের হাতে রাখতে৷ কিন্তু কোন সম্পত্তি সরকার ছাড়তে চায়, কোনটা রাখতে চায়, সেটা এখনও ক্রেতাদের কাছে স্পষ্ট নয়৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন বাজার বিশেষজ্ঞ ধ্রুবজ্যোতি নন্দী৷ তিনি বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার এখনও এমন অনেক সম্পত্তি আছে, যা ধরে রাখা লাভজনক হবে বলে সরকার মনে করছে৷ এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, ভারতের সব বড় শহর ছাড়াও বিশ্বের বেশ কিছু বড় শহরে এয়ার ইন্ডিয়ার নিজস্ব দপ্তর থেকে শুরু করে বিমানবন্দরগুলিতে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা নেওয়া নিজস্ব জায়গা এবং আরও স্থাবর বিষয়-সম্পত্তি আছে৷ এছাড়া বিমান বন্দর কর্মীদের এক প্রশিক্ষিত দলও এয়ার ইন্ডিয়ার আছে, যা আয়তনে বিরাট৷ এর মধ্যে সরকার কোনটা ধরে রাখতে চায়, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়৷ ফলে ঝুলেই থাকলো এয়ার ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ৷ তবে ক্রেতাদের মনোভাবের আঁচ পেয়ে সরকার এখন তড়িঘড়ি সব কিছু স্পষ্ট করতে উদ্যোগী৷ জানা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই নতুন নিলামের আয়োজন হবে৷