‘শ্রমিকরা চাকরি হারাননি, বেতনও পাবেন’
৩ এপ্রিল ২০২০সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বিজিএমইএ-র বরাত দিয়ে করোনা সংকটে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে দাবি করেন বিজিএমইএ-র সভাপতি রুবানা হক।
ডয়চে ভেলে বাংলার ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এ তিনি বলেন, "কোনো শ্রমিক চাকরি হারাননি। লেঅফ করা হয়েছে। অর্ডার বাতিল হওয়ায় কারণে কাজ না থাকায় কিছু কারখানা লেঅফ করতে বাধ্য হয়েছে। গার্ডিয়ানকে আমরা শুধু কত শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটা বলেছি। চাকরি হারানোর কথা বলি নাই।”
বিজিএমইএ-র ওয়েবসাইটের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, করোনার কারণে এরইমধ্যে তিনশ' কোটি মার্কিন ডলার অর্থ মূল্যের অর্ডার বাতিল হয়েছে। যার ফলে ২১ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া, দুইশ' ৪০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থমূল্যের এক্সিস্টিং অর্ডার বাতিল হয়েছে।
এ বিষয়েও দ্বিমত পোষন করে রুবানা বলেন, ওয়েবসাইটের এই হিসাবে যেসব অর্ডার আপাতত স্থগিত করা হয়েছে সেগুলোও বাতিলের তালিকায় ধরা হয়েছে। বিজিএমইএ ওইসব অর্ডার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
"যেসব এক্সিস্টিং অর্ডার বাতিল হয়েছে বা স্থগিত হয়েছে আলোচনা করে আমরা সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইইউর কিছু ক্রেতা আমরা ফেরত আনতে পেরেছি। কিন্তু অ্যামেরিকার ক্রেতাদের ফেরত আনা যাচ্ছে না।”
অর্ডার বাতিল হলে কেন শ্রমিকরা বেতন পাবেন না এবং ব্যবসায়ীরা কেন নিজেরা শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে রুবানা বলেন, "শ্রমিককে অবশ্যই বেতন দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তরল ঋণের আবেদন করেছি। সেটা এপ্রিলের ২৫ তারিখের আগে কোনোভাবেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু মার্চ মাসের বেতন তো দিতে হবে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বলেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে তাদের দ্রুত লোনের ব্যবস্থা করতে।
"শ্রমিককে বেতন দিতেই হবে, কোনো মাফ নেই। তবে নিয়ম অনুযায়ী হয়ত সাত কর্মদিবসের মধ্যে বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমি আশা করছি। যেহেতু ব্যাংকগুলো বিষয়টি বিবেচনা করছে, তাই কোনো মালিক শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ার কথা বলতে পারবেন না।”
তিনি দ্রুত মার্চ মাসের বেতন দিয়ে শ্রমিকদের আস্বস্ত করতে চান জানিয়ে বলেন, "এটা না করতে পারলে শ্রমিকরা আমাদের উপর আস্থা হারাবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্রুত ভালো হলে হয়ত দুই সপ্তাহের মধ্যে বায়াররা ফেরত আসবেন। তখন আমাদের শ্রমিক লাগবে। শ্রমিক ছাড়া কাজ হবে না।
"লেঅফ ক্লজ অনুযায়ীও আমরা সর্বোচ্চ ৬০ দিন শ্রমিককে বসিয়ে রাখতে পারবো। তারপর শ্রমিক ফেরাতেই হবে। শ্রমিক ছাড়া ব্যবসা সম্ভব না। আমরা আশা করছি, আগামী দুই বা সর্বোচ্চ তিন মাস এ অবস্থা থাকবে। পরিস্থিতি পাল্টাবে, লোকজন পোশাক কেনা শুরু করবে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক মালিকদের একজোট থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের ও শ্রমিকদের সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি।
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আক্তারও এই টকশোতে অংশ নেন এবং শ্রমিকদের অসুবিধা তুলে ধরেন।
এসএনএল/এসিবি