শৈশব কি হারিয়ে যাচ্ছে?
ঢাকা-কলকাতার মধ্য বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে ক’জন আজকাল মাঠে-ময়দানে, জঙ্গলে খেলাচ্ছলে শৈশব উপভোগ করার সুযোগ পায়? জার্মানিতে শিশুদের ৬ বছরের আগে স্কুলে যাওয়া নিষেধ, অক্ষরজ্ঞান তখনই হয়৷
ফিরিয়ে দাও শৈশব
দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার মূলমন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা৷ একেবারে ছোট বয়স থেকেই তাই চাপের শেষ নেই৷ পড়াশোনা, নাচগান, আঁকা, শরীরচর্চা, খেলাধুলা – সব কিছুতেই সেরা হয়ে ওঠার জন্য শিশুদের উপর চাপ দেওয়া হয়৷ এর পরিণাম কি ভালো হতে পারে?
সন্তান পালনে পেশাদারি সাহায্য
অন্য সব বিষয়ের মতো সন্তান পালনের ক্ষেত্রেও পুরানো অনেক ধ্যানধারণা আজ অচল হয়ে পড়েছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীরা জার্মানিতে বাবা-মায়েদের এই কাজে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করেন৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তারা সন্তান পালন সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন৷ স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাই ধাত্রীর পারিশ্রমিক দেয়৷
বাবা-মা একটু সময় দিলে
জন্মের পর শিশুর জন্য বাবা-মায়ের স্পর্শ, তাদের আদর-ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু তাদের অত সময় আছে কি? জার্মানিতে নানা মডেলের আওতায় বাবা-মা প্রথম বছরে সন্তানের সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর সুযোগ পান৷ রাষ্ট্র ও কর্মদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে দেয়৷
পুঁথিগত শিক্ষার প্রস্তুতি
এক থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে জার্মানির শিশুরা সাধারণত কিন্ডারগার্টেনে যাবার সুযোগ পায়৷ কিন্তু সেখানে পুঁথিগত শিক্ষা নিষিদ্ধ৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের কাছ থেকে খেলাচ্ছলে জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নানারকম শিক্ষা পায় কচিকাচারা৷ স্কুলে যাবার আগে এই প্রস্তুতি তাদের খুব কাজে লাগে৷
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধ
ঢাকা-কলকাতার মতো শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে অনেক শিশু সহজে মাটির সংস্পর্শে আসতে পারে না৷ জার্মানিতে শিশুদের প্রকৃতির কোলে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়৷ এমনকি কিছু এলাকায় জঙ্গলের মধ্যেই কিন্ডারগার্টেন রয়েছে৷ গাছপালা ও নানা প্রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় হয় তাদের৷
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
সাধারণত ৬ বছর বয়সে স্কুলে যায় জার্মানির বাচ্চারা৷ তখনই পড়াশোনা শুরু হয়৷ প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ স্কুলে আলাদা ইউনিফর্ম নেই৷ প্রথম দিনে কচিকাচাদের উপহারে ভরা এক বিশেষ ঠোঙা দেওয়ার রেওয়াজ আছে৷
পড়ার চাপ
স্কুলের পড়াশোনা স্কুলেই শেখানোর চেষ্টা করা হয়৷ বাড়িতে ফিরে কিছু হোমওয়ার্ক করলেই চলে৷ সাধারণত গৃহশিক্ষক বা কোচিং ক্লাসের প্রয়োজন পড়ে না৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা দূর করতে বাড়তি সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে৷ শিক্ষা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে বলে জার্মানিতে অনেক সংস্কার আটকে আছে বলে নানা মহলে অভিযোগ ওঠে৷