1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রায় কার্যকর দেখতে চাই’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৯ মে ২০১৩

জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শেরপুরের সোহাগপুরের গণহত্যা৷

https://p.dw.com/p/18UuB
ছবি: Reuters

১৯৭১ সালের ২৫শে জুলাই তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই সোহাগপুর ও আশেপাশের এলাকায় ১৮৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ ১৭০ জন নারী শিকার হন ধর্ষণ ও নির্যাতনের৷

সোহাগপুরের সেই হত্যাযজ্ঞে বহু নারী স্বামী হারিয়ে বিধবা হন৷ তাই সোহাগপুরের বেণুপাড়া এখনও বিধবা পল্লী নামে পরিচিত৷ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সেই সোহাগপুর গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী৷ তিনি সেই গণহত্যায় তাঁর বাবা, ভাই এবং চাচাসহ আট জনকে হারিয়েছেন৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর৷ তিনি মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীও দিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় শুনে তাই তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ অবশ্য তাঁর কথায়, একমাত্র রায় কার্যকর হলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে৷

শেরপুর জেলার নালিতাবড়ি উপজেলা থেকে আরো ১১ কি.মি. ভিতরে সোহাগপুর৷ জালালউদ্দিন জানান, একাত্তরে সোহাগপুরসহ ঐ এলাকার বেণুপাড়া ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি৷ আর পাশের উপজেলা ঝিনাইগাতির আহম্মদ নগরে ছিল আলবদর ক্যাম্প৷ সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন তখনকার ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কামারুজ্জামান৷ কামারুজ্জামানের বাড়ি বাজিতপুরে৷ ২৫শে জুলাই ভোরে তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশে নালিতাবাড়ির তেলিখালি সেনা ক্যাম্প থেকে আলবদর রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সোহাগপুরে হামলা চলোয়৷ তারা সোহাগপুর ও আশেপাশের এলাকায় নির্বিচারে ‘ব্রাশ ফায়ার' করে ১৮৭ জনকে হত্যা করে৷ পুরো সোহাগপুর আর বেণুপাড়ায় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে পুরুষ শূন্য করা হয়৷ নির্যাতন এবং ধর্ষণ করা হয় নারীদের৷ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ চালায় লুটপাট৷ জালাল উদ্দিন একটি পরিত্যক্ত ঘরের মাচায় আত্মগোপন করে প্রাণে রক্ষা পান৷

পাক সেনা আর আলবদররা চলে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান তাঁর বাবা, ভাই এবং চাচাসহ তাঁদের পরিবারের আট জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ এরপর তিনি সেহাগপুর এবং বেণুপাড়ায় গণহত্যার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেন৷ জালাল উদ্দি জানান, তিনি ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নিহত সবাইকে ৬৪টি কবরে মাটি চাঁপা দেন৷ একাজ করতে গভীর রাত হয়ে যায়৷ বলা বাহুল্য, হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বেণুপাড়া পুরোপুরি পুরুষ শূণ্য করা হয়৷ এ কারণে বেণুপাড়াকে বলা হয় বিধবা পল্লি৷ এখনও স্বামী হারা ৩৪ জন বিধবা নারী বেঁচে আছেন সেখানে৷

সোহাগপুর আর বেণুপাড়ায় একাথিক গণকবর এখানও সেই গণহত্যার সাক্ষ্য হয়ে আছে৷ সেখানে আছে স্মৃতিসৌধ৷ সোহাগপুরের মানুষ তিন যুগ ধরে এই গণহত্যার বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন৷ জালাল উদ্দিন জানান, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ে তাঁদের মধ্যে এখন আনন্দ৷ তবে তাঁদের মধ্যে আতঙ্কও আছে৷ জালাল উদ্দিন জানান, ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ায় জামায়াত-শিবিরের লোকজন তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে৷

এদিকে, রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হয়েছে৷ আর তা প্রমাণ করে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে একাত্তরে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত৷ অন্যদিকে, কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দাবি করছেন যে, এটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়৷ তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷

Bangladesch Generalstaatsanwalt Mahbubey Alam
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমছবি: picture alliance/AP Photo
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য